স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, করোনা মহামারি মোকাবেলায় গোটা বিশ্ব যেখানে টালমাটাল অবস্থায় আছে সেখানে বাংলাদেশ রেমিট্যান্স এ ঊর্ধ্বগতিতে রয়েছে। দেশে খাদ্য সংকট হয়নি, মানুষ কোথাও না খেয়ে থাকেনি, দেশের পদ্মা সেতু বাস্তবায়নসহ সকল মেগা প্রজেক্টের কাজ পুরোদমে চলছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি না কমে আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মাঠে, রাজধানীর চারটি হাসপাতালে নতুন করে ১২৬টি ডায়ালিসিস বেড উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, চারটি নতুন মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে, ২০টি নতুন মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণ করা হচ্ছে। দেশের সকল জেলা হাসপাতালে ১০ বেডের আইসিইউ বেড ও ১০ বেডের ডায়ালিসিস বেড করার কাজ এগিয়ে চলাসহ বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কাজগুলো দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। এসব সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের স্বাস্থ্য খাতের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই।
স্বাস্থ্য খাতের সফলতার কারণেই গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে বাংলাদেশ ১৭ কোটির বেশি মানুষ বা দেশের ৮৫ ভাগ মানুষকে টিকা দিতে সক্ষম হয়েছে। অথচ আফ্রিকার দেশগুলোতে মাত্র ১২ ভাগ মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশের মানুষ বিদেশে বেশি কাজের সুযোগ পাচ্ছে, ব্যবসার ঊর্ধ্বগতি লাভ করেছে, দেশের অর্থনীতির চাকা চাঙ্গা হয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের বেড বৃদ্ধি প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই হাসপাতালে আগে বেড ছিল ৮০০টি। আমরা এটিকে ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করার মাধ্যমে এখন সাড়ে ১৩০০ বেড করেছি। নতুন আরো ২৪০ বেড বৃদ্ধির কাজ চলমান রয়েছে। আজকেই দেশের কুর্মিটোলা, মুগদা, মিটফোর্ড হাসপাতালের সাথে একযোগে আরো ১২৬টি নতুন ডায়ালিসিস সেন্টার স্থাপন করা হলো। এই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে উন্নত বিশ্বের হাসপাতালের ন্যায় নতুন ২০টি বেড স্থাপন করা হলো। একই সাথে ঢাকার হাসপাতালের পাশাপাশি ঢাকার বাইরে ৮ বিভাগে ৮টি ১৫ তলাবিশিষ্ট সমন্বিত ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। ‘
তিনি বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি ঢাকার মানের সেবা ঢাকার বাইরে ছড়িয়ে দিতে। এ জন্য জেলা হাসপাতালে দ্বিগুণ বেড বৃদ্ধিসহ মফস্বল এলাকায় চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিতে ১৪১৫৬টি কমিউনিটি সেন্টার করা হয়েছে। এগুলো থেকে দিনে ৯ লাখেরও বেশি মানুষ চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন, যা চিকিৎসাসেবায় বর্তমান সরকারের ডিসেন্ট্রালাইজেশন চিন্তার ফসল।
টিকা প্রদান প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সব মিলিয়ে এখন ১৭ কোটির বেশি মানুষকে টিকা দিতে পেরেছি। আমাদের টার্গেটের প্রায় সাড়ে ১১ কোটি মানুষ টিকা পেয়েছে। হাতে এখন আমাদের ১০ কোটির মতো টিকা আছে। এখনো অনেকেই টিকা নেননি বা নিতে চাচ্ছেন না। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে বর্তমানে কভিডে মৃত্যুর ৮৫ ভাগ মানুষই নন ভ্যাক্সিনেটেড। আক্রান্তেও নন-ভ্যাক্সিনেটেড মানুষ শীর্ষে। দেশ কভিডে এত ভালো করেছে ভালো চিকিৎসাসেবা ও সময় মতো ভ্যাক্সিনেশন কাজ করার কারণেই। এ জন্য টিকা নিতে দেশের অবশিষ্ট মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে। ‘
তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে অন্যতম একটি সভ্য জাতি বলেই দেশের এত বিশাল সংখ্যক মানুষ এত স্বল্প সময়েই টিকা গ্রহণ করেছে। আগামীতেও বাংলাদেশ সভ্যতার নজির স্থাপন করবে এবং কভিড মোকাবেলায় বাংলাদেশ বিশ্বের রোল মডেল হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, ঢাকার মানের চিকিৎসাসেবা এখন বিভাগীয় শহর থেকে দিতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের চেষ্টা থাকবে দ্রুততার সাথে দেশের প্রান্তিক মানুষকে উন্নত মানের চিকিৎসাসেবার আওতায় নিয়ে এসে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা। সে অনুযায়ী এই করোনাকালেও স্বাস্থ্য খাতে ৪০ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর এ বি এম খুরশিদ আলম, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল) নাজমুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রফেসর আহমেদুল কবীরসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ।