Sunday , 19 May 2024
সংবাদ শিরোনাম

দুখু মিয়ার মজার ছড়া

ছোট্ট বন্ধুরা, তোমরা কি সকালে ‘ভোর হলো, দোর খোলো, খুখুমণি ওঠ রে’ ছড়া শুনে ঘুম থেকে জাগো? তোমাদের বাবা বা মা এরকম সুন্দর ছড়া কেটে তোমাদের জাগিয়ে তোলে কি? যদি জাগায় তাহলে নিশ্চয় সেটা মজার বিষয়। তোমরা জানো কি এই ‘ভোর হলো, দোর খোলো’ সুন্দর ছড়াটির লেখক কে? আমিই বলে দিচ্ছি, এ ছড়াটির লেখক আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি তোমাদের জন্য মজার মজার কত্ত ছড়া কবিতা লিখেছেন। লিখেছেন গল্প ও নাটক। সুন্দর সুন্দর অনেক গান লিখেছেন। সেসব গান তোমরা অনেকেই প্রায়ই গাও।

আমাদের জাতীয় কবির ছোট্টবেলার নাম কিন্তু দুখু মিয়া। আজ শুনাবো দুখু মিয়ার মজার কিছু ছড়া-কবিতার কথা। নিশ্চয়ই ‘খুকি ও কাঠবেরালি’ কবিতা পড়েছো। সেখানে কাঠবেরালি একাই সব পেয়ারা খায় বলে খুকি রাগ করে তাকে বলছে, ‘ডাইনী তুমি হোঁৎকা পেটুক/খাও একা পাও যেথায় যেটুক!’ হোঁৎকা পেটুক নাম শুনে খুবই মজা পাচ্ছো তাই না?

তোমাদের মধ্যে অনেক দুষ্টু খোকা আছে যারা কী মজার কাণ্ডই না ঘটায়। এমন এক দুষ্টু খোকার কী ইচ্ছে শোনাচ্ছেন আমাদের দুখু মিয়া। ছড়ার নাম ‘খোকার খুশি’। খোকার মামার বিয়েতে অনেক খাওয়া দাওয়া আর আনন্দ। তাই এরকম আনন্দ পেতে খোকা বলছে, ‘আমি রোজ করব বিয়ে।’ হা হা কী হাসির কথা না বলো? খোকা প্রত্যেকদিন বিয়ে করবে!

তোমরা কি শুধু ছড়া কবিতা আর গল্প শুনে যাও? নাকি নিজেও শুনাও? যদি নিজেও শুনিয়ে থাকো তবে আবোলতাবোল গাল গপ্প শুনিয়ো না। দাদুভাই বা দাদি মায়েরা কিন্তু ক্ষেপে গিয়ে উল্টাপাল্টা গল্পের মতোই কান মলিয়ে থাপ্পড় কষে দিবে। যেমন এক খোকা তার মাকে গপ্প শুনাচ্ছিলো। কিন্তু সে গপ্পটির না ছিলো আগা না ছিলো গোড়া। রাজা নিয়ে অদ্ভুত সব ঘটনা। আজগুবি সব গপ্প শুনে গপ্পের রাজা দাদু গ্যালেন ক্ষেপে। থাপ্পড় দিলেন না মেপে। দুখু মিয়া লিখছেন ‘খোকা গপপ বলা’ বলা নামক হাসির কবিতায়, ‘দেখেই রাজা দাদার মতন খিচমিচিয়ে উঠে-/‘হাঁরে পুঁটে!’/বলেই খোকার শ্রীযুক্ত দাদা সটান/দুইটি কানে ধরে খোকার চড় কসালেন পটাম।’ তাই বলি গপ্প শুনালে আগাগোড়া ঠিক রেখে সুন্দর করে বর্ণনা দিবে।

আচ্ছা বন্ধুরা, তোমরা যে হাতের লেখা লিখো তা ক্যামন? খুব মনোযোগ দিয়ে সুন্দর করে লিখবে কিন্তু। নইলে ছানাবড়া লেখা দেখে বাবা-মা, শিক্ষক এমনকি বন্ধুরাও হাসতে পারে। দ্যাখোনা কী হাসির এক চিঠির কথা আমাদের জানাচ্ছেন দুখু মিয়া। ছোট্টবোন তাকে লিখেছিলো চিঠি। তিন লাইনের। কিন্তু অক্ষরগুলো এতোটাই ছানাবড়া ছিলো যে পড়তে যেয়ে কবির বেশ কষ্ট হয়েছিলো। অক্ষরগুলোর কী চমৎকার হাস্যরসের বর্ণনা দিচ্ছেন ‘চিঠি’ নামক ছড়ায়, ‘যদিও তোর অক্ষর/হাত পা যেন যক্ষর/পেটটা কারুর চিপসে/পিঠটে কারুর টিপসে/ঠ্যাংটা কারুর লম্বা/কেউ বা দেখতে রম্ভা/কেউ যেন ঠিক থাম্বা/কেউ বা ডাকেন হাম্বা/থুতনো কারুর উচ্চে/কেউ বা ঝুলেন পুচ্ছে।’

বন্ধুরা তোমাদের চারপাশে কত্ত ধরনের বন্ধুবান্ধব দ্যাখো তাই না। সবাই কিন্তু মানুষ। তাই বলে কি সব্বার আচরণ বা হাবভাব এক? না সবার হাবভাব এক নয়। কেউ ভীষণ পাঁজি। কেউ ছ্যাছচড়। কেউ হাবাগোবা। কেউ অসম্ভব ভদ্র। এতসব মানুষের মধ্যে যারা সবাইকে ভালোবাসে। সম্মান করে। গুরুজনদের কথা শুনে। ঠিক মতো খাওয়া নাওয়া করে। ঘুমায়। খেলাধুলো করে তারাই সবার আদর পায়। তাদেরকে সবাই দোয়া আশীর্বাদ করে। যদি ঘরে বসে থেকে বেশি বেশি খাওয়া দাওয়া করো। খেলাধুলো না করো তবে মোটা হয়ে যাবে। কিছুই করতে তখন আর ভালো লাগবে না। একটুখানি কাজে ক্লান্ত হয়ে পড়বে। বাইরে যেয়ে ঘুড়ি উড়াবে। বন্ধুদের নিয়ে কানামাছি, গোল্লাছুট, কিৎ কিৎ, বল, হাডুডু ইত্যাদি খেলবে। সাঁতার শিখে সাঁতার দিবে। দেখবে কত্ত আনন্দ পাচ্ছো সবকিছু করে। পড়ায় মনোযোগ বসবে। আর যদি না করে ঘরে বসে থেকে মোবাইল ও কম্পিউটারে গেম খেলো তাহলে বেখাপ্পা চেহারার মোটা হোঁদল কুঁৎকুঁৎ হয়ে যাবে। এমনই মোটা হোঁদল কুঁৎকুঁতের কষ্টের হাস্যকর উপস্থাপন করছেন দুখু মিয়া। ‘হোঁদল-কুঁৎকুঁতের বিজ্ঞাপন’ নামক কবিতায় লিখছেন, ‘ষাঁড়ের নাদ সে নাদুস নুদুস গোবর-গণেশ সে শ্রীমান/নাঁদার মতন য়্যাভ্ভুঁড়ি তাঁর চলতে গিয়ে হুমড়ি খান!’

এরকম আরও কত্ত মজার ছড়া কবিতা আছে তা যদি পড় তাহলে হাসবে আর অনেক কিছু জানবে। তোমরা আজকাল মটু-পাটলু, নাট-বল্টু ইত্যাদি দেখে আনন্দ পাও। এগুলোর বাইরেও কিন্তু অনেক মজার মজার হাসির বই আছে সেগুলোও পড়তে পারো। পড়লে নিজেকে আরো জ্ঞানী করে তুলতে পারবে। হতে পারবে ভালো মানুষ। সৎ মানুষ হতে গেলে আমরা নজরুলের ছড়া কবিতা পড়তে পারি। সেখানে তিনি কীভাবে সৎ থাকা যায় তারও পাঠ দিয়েছেন। যেমন তাঁর বিখ্যাত ‘লিচু চোর’ কবিতায় চুরি না করার উপদেশ দিচ্ছেন,
‘যাব ফের? কান মলি ভাই,
চুরিতে আর যদি যাই!’

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top