Saturday , 27 April 2024
সংবাদ শিরোনাম

আঙুলের ছাপ, অতঃপর চীনে প্রবেশ

ঢাকা থেকে প্রথম গন্তব্য চীনের গুয়াংঝু। প্রায়শই ইমিগ্রেশন পার হওয়ার সময় কর্মকর্তারা খুঁটিনাটি জানার চেষ্টা করেন—কোথায় যাচ্ছি, কেনো যাচ্ছি আবার কখনওবা কবে ফিরবো। তবে এবারের চীন সফরটি পুরোপুরি ভিন্ন। ঢাকায় ইমিগ্রেশনে কোনো প্রশ্ন করলো না। এমনকি চীনা ইমিগ্রেশনও না। আগমনী ফরমে লিখতে হয় চীনে কোথায় থাকবো। আমি লিখেছি, চীন সরকারের তথ্য বিভাগ ঠিক করবে আমি কোথায় থাকবো।

ফ্লাইটে নির্ধারিত আসনে বসার পর সামনের মনিটর/স্ক্রিনে চীনা ভাষায় সব নির্দেশনা দেখে আগের বার চীন সফরে ভাষাগত সমস্যার কথা মনে পড়লো। এয়ার হোস্টেসকে ডেকে বললাম, আমি মান্দারিন জানি না। অন্তত মনিটরের ভাষাটা বদলে ইংরেজি করে দিন। এয়ার হোস্টেস তৎক্ষণাত তা করে দিলেন।

এরপর বাকি সময় স্ক্রিনে চোখ রেখে আর কখনো বা উইন্ডো দিয়ে বাইরে তাকিয়ে সময় কাটিয়েছি। ইংরেজি সাবটাইটেলে চীনা ভাষায় একটি অ্যাকশান ছবিও দেখলাম। চীনা ছবি দেখা হয় না। এর চেয়ে বরং হলিউডের ছবিতে আমেরিকান নায়কদের বীরগাঁথা দেখে আমরা অভ্যস্ত। যে চীনা অ্যাকশান ছবিটি দেখলাম সেটিও বেশ ভালো লেগেছে। সেখানেও আছে চীনাদের মহত্ব, বীরত্বের কথা।

তবে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া দেখেছি গুয়াংঝুর বাইয়ুন বিমানবন্দরে নামার পর। ইমিগ্রেশন কাউন্টারে যাবার আগেই সবাইকে সেলফ ফিঙ্গার প্রিন্ট বুথে পাঠানো হলো। চীন কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি যে নিয়ম চালু করেছে তাতে ওই দেশে প্রবেশকারী ১৪ থেকে ৭০ বছর বয়সী সব বিদেশির আঙুলে ছাপ সংরক্ষণ করা হবে। আঙুলের ছাপ ছাড়া বিদেশিদের প্রবেশের সুযোগ নেই।

বাইয়ুন বিমানবন্দরের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী, আঙুলের ছাপ দেওয়ার মেশিনে পাসপোর্টের ইনফরমেশন পেজটি স্ক্যান করার জন্য ধরার পরই স্ক্যান হলো। তাৎক্ষণিকভাবে মেশিনটি জেনে নিলো পাসপোর্টধারীর জাতীয়তা। সেই দেশের ভাষা বলা শুরু করলো মেশিনটি। যেমন আমি বাংলাদেশি পাসপোর্ট স্ক্যান করার পরই মেশিনটি বলতে শুরু করে-‘আপনার দু’হাতের বুড়ো আঙুলের ছাপ দিন। এরপর দুই হাতের বাকি আট আঙুলের ছাপ দিন।’ এভাবে দুই হাতের ১০ আঙুলের ছাপ নেওয়ার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবেই টোকেন বের হলো। সেই টোকেন নিয়ে এবার গন্তব্য ইমিগ্রেশন কাউন্টার। সেখানেও দীর্ঘ লাইন। কিন্তু অনেকগুলো কাউন্টার থাকায় পাঁচ মিনিটেরও বেশি অপেক্ষা করতে হলো না।

চীনা ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা কোনো প্রশ্ন করলেন না। কেবল বুড়ো আঙুলের ছাপ মিলিয়ে দেখলেন। পাসপোর্টে সিল দেওয়ার পরপরই ইমিগ্রেশন কাউন্টার দিয়ে ভেতরে ঢোকার দরজা খুললো। কার্যত এটিই চীনে প্রবেশ। ইমিগ্রেশন কাউন্টার অতিক্রমের পর এক তলা নিচেই লাগেজ বেল্ট। ফ্লাইট থেকে নামা, ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে লাগেজ বেল্ট এলাকা পর্যন্ত পৌঁছাতে সময় লেগেছে প্রায় আধা ঘন্টা। এ সময়ের মধ্যেই ফ্লাইট থেকে লাগেজ বেল্টে চলে এসেছে।

লাগেজ নেওয়ার পর আমার পরবর্তী গন্তব্য শিনজিয়ান। ট্রান্সফার কাউন্টারে পৌঁছার পরই গন্তব্য ও নাম জিজ্ঞাসা করলেন সংশ্লিষ্ট কর্মীরা। বোর্ডিং পাস তারা আগেই প্রস্তুত রেখেছিলেন। আমাকে বোর্ডিং পাস দিয়ে লাগেজ বুঝে নিলেন তারা। এরপর এক তলা ওপরে ওঠে সিকিউরিটি চেকিংয়ের পর পরবর্তী ফ্লাইট ধরার জন্য বিনা ভাড়ার ইলেকট্রিক গাড়িতে করে অভ্যন্তরীন টার্মিনালে যাত্রা।

চীন সফর শেষে ঢাকায় ফেরার পথেও ফ্লাইট ছিল গুয়াংঝু থেকে। তবে এবার হাতে সময় থাকায় বেশ কিছু সময় আধুনিক এই এয়ারপোর্টটি ঘুরে দেখার সুযোগ হয়। ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড নেওয়ার কাজটিও এখানে নিজে নিজে করতে হয়। ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড জেনারেট করে এমন বেশ কিছু মেশিন আছে টার্মিনালের বিভিন্ন প্রান্তে। পাসপোর্ট নিয়ে ওই মেশিনে ইনফেরশন পেজটি স্ক্যান করার পরই বিনামূল্যে ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড মিলে। একটি পাসওয়ার্ডের মেয়াদ থাকে পাঁচ ঘন্টা। তবে একাধিক বার পাসওয়ার্ড নেওয়ারও সুযোগ আছে।

চীনের গুয়াংডং প্রদেশের রাজধানী গুয়াংঝুর এই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি যাত্রী সংখ্যা বিবেচনায় দেশটিতে তৃতীয় এবং বিশ্বে ত্রয়োদশ ব্যস্ততম বিমানবন্দর। গত বছর সাড়ে ছয় কোটিরও বেশি যাত্রী ওই বিমানবন্দর ব্যবহার করেছে।

গত এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে বাইয়ুন বিমানবন্দরে বিশালাকৃতির দ্বিতীয় টার্মিনালটি চালু হয়। চায়না ডেইলি পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী, দ্বিতীয় টার্মিনালটির আয়তন আট লাখ ৮০ হাজার ৭০০ বর্গমিটার। এটিই চীনের বৃহত্তম টার্মিনাল। এটি এক বছরে ৪৫ লাখ যাত্রীকে সেবা দিতে পারবে। একসঙ্গে ৫৮টি ফ্লাইটে যাত্রী ওঠানামার জন্য বোর্ডিং ব্রিজ আছে এই টার্মিনালে।

বাইয়ুন বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালে আছে ১২০টি স্বয়ংক্রিয় চেক ইন মেশিন, ৫২টি স্বয়ংক্রিয় চেক ইন ব্যাগেজ মেশিন ও ৫০টি ইমিগ্রেশন ই-চ্যানেল। যাত্রীদের পাসপোর্ট স্ক্যান ও পরিচয় যাচাইয়ের জন্য ই-চ্যানেল বর্ডার চেক পোস্টগুলোর আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয় মাত্র ৩০ সেকেন্ডে।

বিমানবন্দরে আছে স্পেসটাইম টানেল। যাত্রীদের ভাগ্য ভালো হলে সেই টানেলে রোবটের চলাচলও দেখতে পারেন।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top