Friday , 19 April 2024
সংবাদ শিরোনাম

রোগীদের জন্য রোজা

রোজা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তবে কিছু কিছু জটিল রোগের ক্ষেত্রে রোজা রাখায় বিধিনিষেধ থাকে। রোগীদের মধ্যে কারা রোজা রাখতে পারবেন, আর কাদের রোজা রাখা উচিত নয়—এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ

হৃদরোগ
জটিল বা ঝুঁকিপূর্ণ হৃদরোগী ছাড়া অন্য হৃদরোগীদের জন্য রোজা বেশ উপকারী। এ সময় বেশ নিয়ম মেনে চলা হয় বলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেই থাকে।

♦ রক্তচাপের রোগী, যাঁদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে তাঁদের রোজা রাখতে বাধা নেই; বরং উপকারী। তবে খাওয়াদাওয়ায় লবণ, তেল-চর্বিযুক্ত বা ভাজাপোড়া খাবার কম খেতে হবে।

♦ রান্না করা ছোলার পরিবর্তে ভেজানো কাঁচা ছোলা, পেঁয়াজ, মরিচ, আদা দিয়ে খেতে পারলে ভালো, পেটের জন্যও উপকারী। এর ভিটামিন, মিনারেলস, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, পটাসিয়াম রক্তচাপ বা হার্টের জন্য ভালো। আবার সর বাদ দিয়ে দই বা টক দই খেলে ফ্যাটের মাত্রাও কমিয়ে দেয়, এতে থাকা ব্যাকটেরিয়াগুলোও উপকারী।

♦ আনকন্ট্রোল্ড অ্যানজাইনা বা নিয়মিত বুকের ব্যথা থাকে যাঁদের, তাঁদের তিন বেলা ওষুধ খেতে হয় বলে রোজা না রাখাই উচিত।

♦ হার্টের রোগীদের রোজা রাখা অবস্থায় যদি খুব বেশি খারাপ অনুভব হয়, তবে দ্রুত রোজা ভেঙে ওষুধ খাওয়া উচিত।

ডায়াবেটিস
কিছু বিশেষ সতর্কতা, নিয়ম মেনে চললে বেশির ভাগ ডায়াবেটিক রোগীই রোজা রাখতে পারেন।  যেমন—

♦ রোজার সময় ডায়াবেটিক রোগীদের ব্যায়াম করা সম্ভব হয় না। তাঁরা তারাবির নামাজের পর একটু হাঁটাহাঁটি বা হালকা ব্যায়াম করবেন।

♦ সময় শেষ হয়ে যাওয়ার ঠিক কিছুক্ষণ আগে সাহরি খেয়ে নিলে ভালো। রক্তে সুগারের স্বল্পতা (হাইপোগ্লাইসেমিয়া), সুগারের আধিক্য (হাইপারগ্লাইসেমিয়া), ডায়াবেটিক কিটো-অ্যাসিডোসিস, পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশনজাতীয় জটিলতা থেকে মুক্ত থাকতে সতর্ক থাকুন।

♦ সাহরির দুই ঘণ্টা পর এবং ইফতারের এক ঘণ্টা আগে রক্তের সুগার পরীক্ষা করতে পারেন। সুগারের পরিমাণ কমে ৩.৯ মিলিমোল বা লিটার হয়ে গেলে রোজা ভেঙে ফেলুন। আবার সুগারের মাত্রা ১৬.৭ মিলিমোল অথবা লিটার বা তার বেশি হলে প্রস্রাবে কিটোন বডি পরীক্ষা করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

♦ মুখে খাওয়ার ওষুধ বা ইনসুলিনের ডোজ কিছুটা কমাতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

গর্ভবতী মা
গর্ভকালীন সময়ের ওপর নির্ভর করে একজন গর্ভবতী মা রোজা রাখতে পারবেন কি না। এ ক্ষেত্রে কিছু বিষয় হলো—

♦ গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস ও শেষের তিন মাস একটু ঝুঁকিপূর্ণ বলে এই সময় রোজা না রাখাই ভালো। তবে কেউ ইচ্ছা করলে মধ্যবর্তী তিন মাসে রোজা রাখতে পারেন।

♦ গর্ভাবস্থায় যাঁরা রোজা রাখতে চান, সাহরিতে তাঁরা একজন স্বাভাবিক মানুষের খাদ্যতালিকা অনুযায়ী খাবার খাবেন। তবে ক্যালরি ও আঁশযুক্ত খাবারের দিকে বেশি খেয়াল রাখতে হবে।

♦ রোজার সময় বেশি বিশ্রাম নিন। দুশ্চিন্তা এড়িয়ে চলুন।

♦ গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের রোগী বা যাঁরা হাই রিস্ক প্রেগন্যান্সি বা ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভধারণ করা অবস্থায় রয়েছেন, তাঁদের একটু বেশি সতর্ক থাকা উচিত। হাই রিস্ক প্রেগন্যান্সি মায়েদের রোজা না রাখাই ভালো।

কিডনি রোগ
♦ কিডনি রোগে আক্রান্তরা রোজা রাখতে পারবেন না—এমন কথা নেই। তবে আকস্মিক কিডনি রোগে আক্রান্তদের রোজা রাখা উচিত নয়। রোগ সম্পূর্ণ নিরাময় হওয়ার পর রোজা রাখা যাবে।

♦ রক্তের ক্রিয়েটিনিন ৩০ শতাংশ বেড়ে গেলে, পটাসিয়াম বেড়ে গেলে রোজা রাখা ঠিক হবে না।

♦ কারো যদি সিরাম পটাসিয়াম ৪.৫-এর বেশি থাকে, তাহলে খেজুর, শুকনো ফলমূল, বাদাম, চা, কফি, চিজ, ফলের জুস ইত্যাদি খাওয়া ঠিক হবে না। আবার কারো পটাসিয়াম যদি ৪.৫-এর নিচে থাকে তাহলে পরিমিত ফলমূল খাওয়া যাবে। তবে পানি পানের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।

♦ যাঁদের কিডনি ফেইলিওরের মাত্রা শেষ পর্যায়ে, তাঁদের পক্ষে রোজা রাখা সম্ভব নয়।

♦ ডায়ালিসিস রোগী বাদে অন্যদের একটু বেশি পানি পান করা ভালো। বিশেষত পাথরজনিত রোগে যাঁরা ভুগছেন, তাঁরা রমজানে অবশ্যই বেশি পানি পান করবেন।

♦ ডায়ালিসিস রোগীরা প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার বেশি খাবেন। এ ছাড়া খেতে হবে ফাইবার, সালাদ, সবজি, রুটি, ভাত ইত্যাদি। তবে লবণ, পটাসিয়াম ও ফসফেটযুক্ত খাবার, ভাজাপোড়া ও তৈলাক্ত এবং টিনজাত খাবার বর্জন করতে হবে।

পেটের অসুখ
গ্যাস্ট্রিক আলসার বা পেপটিক আলসারের রোগীদের মধ্যে এই ধারণা রয়েছে যে রোজা রাখলে এসিডিটির সমস্যা বাড়বে। আসলে তা সত্য নয়। বরং নিয়মিত খাবারদাবার, ওষুধ গ্রহণ, ঘুমানোর ফলে এসব সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। তবে ভাজাপোড়াজাতীয় খাবার অবশ্যই তাঁদের পরিহার করা উচিত। বেশি সমস্যা হলে ইফতার ও সাহরিতে রেনিটিডিন বা ওমিপ্রাজল গ্রুপের ওষুধ একটা করে এমনকি রাত্রে দু-তিনবার অ্যান্টাসিড ওষুধ খাবেন।

শ্বাসকষ্ট
যাঁদের শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে, তাঁরা রোজা রাখতে পারেন। অন্যথায় ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে না। এসব রোগীকে নিয়মিত ওষুধ, খাবারের ব্যাপারে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। বেশি সমস্যা হলে ইনহেলার নিতে হবে। এতে রোজার ক্ষতি হয় না বলেই জানা গেছে।

লিভারের অসুখ
লিভারের রোগীদের রোজা রাখা নির্ভর করে রোগটির ধরনের ওপর। কেউ যদি ভাইরাল হেপাটাইটিস নামের রোগে আক্রান্ত হন, তাঁরা খেতে পারেন না, ঘন ঘন বমি হয়, রুচি নষ্ট হয়, জন্ডিস দেখা দেয়। অনেক সময় তাঁদের শিরায় স্যালাইন বা গ্লুকোজ দিতে হয়। তাঁদের পক্ষে রোজা না রাখাই ভালো। আবার যাঁরা লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত, তাঁদের যদি রোগের লক্ষণ কম থাকে, তবে রোজা রাখতে পারেন।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top