রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ভর্তি পরীক্ষার হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের তিন ছাত্রকে সহায়ক কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করিয়েছেন প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. লুৎফর রহমান।
গতকাল বুধবার বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘সি’ ইউনিটের তিন শিফটের পরীক্ষায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিজ্ঞান ভবনের তিনটি কক্ষে তাঁদের নিজ ক্ষমতাবলে দায়িত্ব দেন প্রক্টর।
শিক্ষকরা বলছেন, ভর্তি পরীক্ষার হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রবেশ করতে দেওয়া সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত।
ভর্তি পরীক্ষার হলে দায়িত্ব পালন করা ছাত্ররা হলেন আবদুর রহমান, জাকির হোসাইন ও সোহেল রানা। তাঁরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।
ওই তিন শিক্ষার্থী দায়িত্ব পালনের কথা স্বীকার করে জানিয়েছেন, দায়িত্ব পালনের জন্য প্রতি শিফটে ৫০০ টাকা করে পেয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন অধ্যাপক জানান, দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন তহবিল আছে। সেখান থেকে তাঁদের সহায়তা দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষায় সহায়ক কর্মচারীর দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের দিয়ে পালন করিয়ে প্রক্টর চরম ‘কাণ্ডজ্ঞানহীনতার’ পরিচয় দিয়েছেন। তিনি কোনো ভাবে এটা করতে পারেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বুধবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ‘সি’ ইউনিটের প্রথম শিফট, সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা দ্বিতীয় ও দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত তৃতীয় শিফটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিজ্ঞান ভবনের ৩৩৪ নম্বর কক্ষে জাকির হোসাইন, তৃতীয় বিজ্ঞান ভবনের ৪২৪ নম্বর কক্ষে আবদুর রহমান ও ৪২৫ নম্বর কক্ষে সোহেল রানাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। দায়িত্ব হিসেবে তাঁরা পরীক্ষার কক্ষে থাকা শিক্ষকদের সঙ্গে থেকে প্রশ্নপত্র, উত্তরপত্র আনা-নেওয়া ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির খাতায় স্বাক্ষর করানোর কাজ করেন।
পরীক্ষার কক্ষে দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের এক শিক্ষক বলেন, ‘আমরা প্রথমে বুঝতে পারিনি, ওরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। কেননা, শিক্ষার্থীদের ওই দায়িত্ব পালন করার কথা নয়। বিজ্ঞান অনুষদের পরীক্ষায় গণিত বিভাগের ছাত্রদের কক্ষে কী জন্য রাখা হলো, বিষয়টি পরিষ্কার নয়। ওই ছাত্ররা ভর্তিচ্ছুদের কোনোভাবে সহায়তা করেছে কি-না তাও খুঁজে দেখা যেতে পারে।’
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘মানবিক কারণে ওই তিন ছাত্রকে কিছুটা আর্থিক সহায়তা করার জন্য এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। অন্য কিছু নয়। তারা ভালোভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয়নি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ‘আমি এখনো বিষয়টি শুনিনি। যদি এটি হয়ে থাকে, তবে তা চরম অন্যায় ও খারাপ হয়েছে। দরিদ্র ছাত্রদের সহায়তার জন্য আমাদের অনেক ফান্ড আছে। সেখান থেকে দেওয়া যেতে পারে, তাই বলে পরীক্ষার হলে কাজে পাঠিয়ে নয়। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।