Monday , 20 May 2024
সংবাদ শিরোনাম

ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি আর নেই

জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ও গাইবান্ধা-৫ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়া আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বাংলাদেশ সময় শুক্রবার (২২ জুলাই) দিনগত রাত ২টায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই ওয়েস্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

খবরটি নিশ্চিত করে ডেপুটি স্পিকারের জনসংযোগ কর্মকর্তা স্বপন কুমার বিশ্বাস বলেন, স্যার বাংলাদেশ সময় রাত ২টায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুবরণ করেছেন।

এ ছাড়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ডেপুটি স্পিকারের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন তার ভাতিজা ফাহাদ রাব্বী সৈকত। পোস্টে তিনি লেখেন, ‘বাংলাদেশ সময় আনুমানিক রাত ২টার দিকে (নিউইয়র্ক সময় বিকেল ৪টা) নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া ইন্তেকাল করেছেন। বিষয়টি আমি ফাহাদ রাব্বী সৈকত আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করছি।’

ডেপুটি স্পিকার দীর্ঘ নয় মাস দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। মৃত্যুর সময় তার বড় মেয়ে ফাহিমা রাব্বী রিটা ও একান্ত সচিব তৌফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

মো. ফজলে রাব্বী মিয়া ১৯৪৬ সালের ১৫ এপ্রিল গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা থানার গড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ফয়জার রহমান এবং মাতা হামিদুন নেছা। তার স্ত্রীর নাম আনোয়ারা রাব্বী ।

মো. ফজলে রাব্বী মিয়া ভরতখালী উচ্চবিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং গাইবান্ধা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। তিনি গাইবান্ধা কলেজ থেকে বিএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সমাপ্তির পর তিনি আইন পেশায় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। নিজ পেশার পাশাপাশি তিনি রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।

মো. ফজলে রাব্বী মিয়া ১৯৭৯-৮৬ সাল পর্যন্ত গাইবান্ধা আইন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭৮-৭৯ এবং ১৯৮১-৮২ সময়ে গাইবান্ধা বার-এর নির্বাচিত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮০-৮৬ সাল পর্যন্ত গাইবান্ধা বিএভিএস-এর সভাপতি এবং ১৯৭৮-৮১ পর্যন্ত গাইবান্ধা মহিলা কলেজ গভর্নিং বডির নির্বাচিত সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মো. ফজলে রাব্বী বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির আজীবন সদস্য এবং হামিদুন নেছা গার্লস স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এছাড়া বিভিন্ন সময় এলাকার বিভিন্ন স্কুল-কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকায় বেশ কয়েকটি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি গাইবান্ধা ল’ কলেজ, কালিবাজার এফ আর গার্লস হাইস্কুল, বারোপনা হামিছন্নেসা উচ্চ বিদ্যালয়, গটিয়া দাতব্য স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও এতিমখানা এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী স্কুল (ভরতখালী) এর প্রতিষ্ঠাতা।

মো. ফজলে রাব্বী মিয়া ৮ম জাতীয় সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার এবং চিফ হুইপসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ও অনিয়ম তদন্তের জন্য জাতীয় সংসদ কর্তৃক গঠিত বিশেষ কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি ৩য়, ৪র্থ, ৫ম, ৭ম, ৯ম ও ১০ম জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। চতুর্থ সংসদে তিনি হুইপের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

পঞ্চম ও সপ্তম সংসদে তিনি বিরোধীদলীয় হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সপ্তম জাতীয় সংসদে তিনি সরকারী প্রতিষ্ঠান কমিটি এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এ ছাড়া সংসদে তিনি সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি, কার্য উপদেষ্টা কমিটি, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে কার্যপ্রণালী বিধি সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি নবম সংসদে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

মো. ফজলে রাব্বী মিয়া তিন কন্যা সন্তানের জনক। মৃত্যুকালে তিনি নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে যান।

২৫ জুলাই সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারের একটি ফ্লাইটে তার মরদেহ দেশে আনার কথা রয়েছে।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top