ঈদুল ফিতরে দেশের প্রায় ৩৩ হাজার ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার পাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর। মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ে এসব পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে দুই শতক জমিসহ আধাপাকা নতুন ঘর।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে ঈদ উপহার হিসেবে জমিসহ বাড়ি হস্তান্তর করবেন। এতে দুস্থ ও অসহায় মানুষগুলোর ঈদ আনন্দে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানায়, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ে ৬৫ হাজার ৪৭৪টি পরিবারের জন্য ঘর তৈরি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৩২ হাজার ৯০৪টি ঘর প্রস্তুত হয়ে গেছে। এগুলোই ঈদ উপহার হিসেবে তুলে দেওয়া হচ্ছে। বাকিগুলোর নির্মাণকাজও শেষের পথে।
ঘর ও জমির দলিল হস্তান্তর উপলক্ষে সোমবার চট্টগ্রাম, বরগুনা, সিরাজগঞ্জ এবং ফরিদপুরের একটি করে আশ্রয়ণ প্রকল্পে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
‘মুজিববর্ষে কেউ গৃহ ও ভূমিহীন থাকবে না’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ ঘোষণা বাস্তবায়নে প্রায় ৯ লাখ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। গত বছরের গত ২৩ জানুয়ারি আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে সারাদেশের ভূমি ও গৃহহীন ৬৬ হাজার ১৮৯টি পরিবারের হাতে দুই শতাংশ জমি ও ঘর তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
একই বছরের ২০ জুন আরো ৫৩ হাজার ৩৪০টি পরিবারকে জমি ও নতুন ঘর দেওয়া হয়। অর্থাৎ আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রথম দুই পর্যায়ে এক লাখ ১৭ হাজার ৩২৯টি পরিবার ঘর পেয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় তৃতীয় পর্যায়ে আরো ৬৫ হাজার ৪৭৪টি একক গৃহ নির্মাণের কাজ চলছে। এর মধ্যে চরাঞ্চলে বিশেষ নকশায় নির্মাণ করা হচ্ছে ১ হাজার ৪২টি ঘর।
নতুন এসব ঘরসহ চলতি অর্থবছর পর্যন্ত তিন পর্যায়ে বরাদ্দকৃত গৃহের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৮২ হাজার ৮০৩টি। এ কাজে বরাদ্দ করা হয়েছে তিন হাজার ৯৭১ কোটি টাকা।
এদিকে আগের দুই পর্যায়ের কাজের অভিজ্ঞতায় মুজিববর্ষের উপহারের এসব ঘরকে অধিকতর মজবুত ও টেকসই করতে এগুলোর নকশায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। জমি নির্বাচনের ক্ষেত্রেও নেয়া হচ্ছে বিশেষ সতর্কতা। নতুন নকশায় টেকসই ঘর নির্মাণের ফলে প্রতিটি ঘর নির্মাণের ব্যয়ও বেড়েছে অনেকটাই। তৃতীয় পর্যায়ে প্রতিটি ঘরের নির্মাণ খরচ দুই লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে বরাদ্দ ছিল এক লাখ ৭১ হাজার টাকা এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে এক লাখ ৯০ হাজার টাকা।
নীল, লাল ও সবুজ টিনশেডের প্রতিটি ঘরে রয়েছে ইটের দেয়াল, কংক্রিটের মেঝে এবং টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি দুটি করে শোয়ার ঘর, একটি রান্নাঘর, টয়লেট এবং সামনে খোলা বারান্দা।
এছাড়া তৃতীয় পর্যায়ে প্রকল্পের মধ্যেই মসজিদ, মন্দির, খেলার মাঠ, হাটবাজার এবং আধুনিক ড্রেনেজ সিস্টেমসহ নাগরিক সুযোগ-সুবিধা অন্তর্ভুক্ত করায় এখানকার বাসিন্দারা গ্রামেই শহরের সুবিধা পাচ্ছেন। অন্যদিকে, আগের দুই পর্যায়ের মতো এবারও ঘর পাওয়া দুস্থ ও অসহায় মানুষগুলো নিজেদের জায়গায় কৃষিকাজ, শাকসবজির ক্ষেত-খামার তৈরি, গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগি পালন এবং দোকানপাট করে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছেন। তাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ার সুযোগও পাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে ১৯৯৭ থেকে চলতি অর্থবছর পর্যন্ত মোট ৭ লাখ ৮ হাজার ৩টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। মোট পুনর্বাসিত জনসংখ্যা ৩৫ লাখ ৪০ হাজার ১৫।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে বিশ্বের সর্ববৃহৎ একক জলবায়ু উদ্বাস্তু পুনর্বাসন প্রকল্প হিসেবে কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পে প্রথম পর্যায়ে নির্মিত ১৯টি বহুতল ভবনে ৬০০টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারকে একটি করে ফ্ল্যাট প্রদান করেছেন। খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পে দ্বিতীয় পর্যায়ে ১১৯টি বহুতল ভবন নির্মাণ করে আরো তিন হাজার ৮০৯টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারের পুনর্বাসন কার্যক্রম শেষের পথে রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের জীবনমানের সার্বিক উন্নয়ন ঘটানো। বিশ্বের সর্ববৃহৎ এ আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তার সে স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটছে।