Monday , 20 May 2024
সংবাদ শিরোনাম

৭ই মার্চের ভাষণ এখন বিশ্ব স্বীকৃত

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ বাজানো এক সময় অনেকটা নিষিদ্ধ ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই ভাষণ এখন বিশ্ব স্বীকৃত। জাতিসংঘের প্রতিটি ভাষায় এই ভাষণের অনুবাদ প্রচার করা হচ্ছে। ইউনেস্কো সেই পদক্ষেপটা নিয়েছে। ইতিহাসকে এতো সহজে মুছে ফেলা যায় না। সত্যকে কখনো দাবিয়ে রাখা যায় না। তাই আজকে সত্য উদ্ভাসিত হয়েছে। গতকাল বিকালে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ ২০২১ উদ্‌যাপন উপলক্ষে এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এরপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদর্শন করা হয়। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রান্তে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। আরো বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন মুজিববর্ষ উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব বদরুল আরেফীন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের পটভূমি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, একটি জাতির জন্য তিনি শুধু রণকৌশলই দিয়ে যাননি, তিনি নিজের জীবনটাকেও উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন। তিনি বলতেন, যা কিছু হোক দেশ স্বাধীন হবেই। শুধুমাত্র একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে না। যুদ্ধের রণকৌশলে তার এই বক্তৃতা কত যে কার্যকর এবং তার প্রতিটি পদক্ষেপ যে কত বাস্তবমুখী- সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। লাখো শহীদ জীবন দিয়েছে, মা-বোনেরা নির্যাতিত হয়েছে, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি জাতির পিতার নির্দেশে যে সকল নেতৃবৃন্দ যুদ্ধ পরিচালনা করে আমাদের বিজয় এনে দিয়েছেন তাদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ই আগস্ট বাঙালির জীবনে একটা কালো অধ্যায় হিসেবে এসেছে। কারণ যারা পরাজিত হয়েছিল তারা বসে ছিল না। তারা সর্বক্ষণ ষড়যন্ত্রেই ব্যস্ত ছিল। তাই যখন একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে অর্থনৈতিক মুক্তির পথে জাতির পিতা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, সেই সময় ১৫ই আগস্টের ঘটনা ঘটলো। যেখানে পাকিস্তানি শাসকরা তাকে বারবার হত্যাচেষ্টা করেছে। ফাঁসির আদেশ দেয়া সত্ত্বেও ফাঁসি দিতে পারেনি। আর যে বাঙালির জন্য তিনি নিজের জীবনটাকেও উৎসর্গ করেছেন, যে বাঙালির জন্য সারা জীবনের সব স্বাদ-আহ্লাদ বিসর্জন দিয়েছিলেন, দিনের পর দিন কারাগারের অন্তরালে নির্যাতন ভোগ করেছেন। যে বাঙালিকে আত্মপরিচয়ের সুযোগ দিয়ে গেছেন। একটা রাষ্ট্র দিয়ে গেছেন, একটা জাতি হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন। কি দুর্ভাগ্য যে- তাদের হাতেই জীবন দিতে হলো। শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই না, গোটা পরিবার। আমরা দুই বোন বিদেশে ছিলাম বলে বেঁচে ছিলাম। ‘‘৭৫-এর পরে এই ভাষণটা নিষিদ্ধ ছিল। এ ভাষণ বাজানো যাবে না। দেয়া যাবে না। অলিখিত একটা নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, আজকে সত্য উদ্ভাসিত হয়েছে। যে ভাষণ তার নিজের সৃষ্টি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নিজের সৃষ্টি বাংলাদেশে একদিন নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। আজকে জাতিসংঘে সেটা স্বীকৃতি পেয়েছে। জাতিসংঘের প্রতিটি ভাষায় এই ভাষণটা অনুবাদ করা হয়েছে। বিশ্ব স্বীকৃতি পেয়েছে। সারা বিশ্বের সব থেকে শ্রেষ্ঠ যেসব ভাষণ মুক্তিকামী মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে, তারমধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ৭ই মার্চের ভাষণ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞতা জানাই এই কারণে, ১৯৮০ সাল থেকেই যে সংগ্রাম এটি তারই সাফল্য। আজ ৫০ বছর পূর্তিতে আমরা দেখে যেতে পারলাম যে, ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ আজ বিশ্ব স্বীকৃতি পেয়েছে এবং বাংলাদেশের মানুষও আজকে এটা শুনতে পাচ্ছে, জানতে পারছে, চর্চা করতে পারছে আর আগ্রহ বাড়ছে। এর অন্তর্নিহিত অর্থ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। এখানেই তো সব থেকে বড় সাফল্য। বাঙালি জাতি আজকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। ইন্‌শাআল্লাহ জাতির পিতার আকাঙ্ক্ষা আমরা পূরণ করবো। বাংলাদেশের মানুষ তার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক মুক্তি পাবে। সে মুক্তির পথে আমরা অনেক দূরে এগিয়ে গেছি। ইন্‌শাআল্লাহ আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলবো বলে দৃঢ়তা ব্যক্ত করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি রাজধানীর ধানমণ্ডি ৩২-এ অবস্থিত জাতির পিতার স্মৃতি জাদুঘরের সামনে রক্ষিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিকে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে ইতিহাসের এই মহানায়কের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। জাতির পিতার প্রতিকৃতির বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের পর প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতার এই মহান স্থপতিকে শ্রদ্ধা নিবেদনের অংশ হিসেবে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে এবং প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট শাহাদৎবরণকারীদের স্মরণে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে এ সময় বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। করোনাকাল শুরুর পর প্রথমবারের মতো গণভবন থেকে বাইরে এলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top