Monday , 13 May 2024
সংবাদ শিরোনাম

আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতেই ২১ আগস্ট হামলা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার জন্য আবারও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারকে অভিযুক্ত করে বলেছেন, তাদের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এ ধরনের জঘন্য হামলা সংঘটিত হতে পারে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তখন ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াত জোটের পৃষ্ঠপোষকতাতেই এই হামলা হয়েছিল। তাদের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এ ধরনের হামলার ঘটনা ঘটতে পারে না।’

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছাবিনিময় অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধের ময়দানে ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেড সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ আওয়ামী লীগকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়াই ছিল ওই হামলার উদ্দেশ্য। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২১ আগস্ট সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সভা করতে গিয়ে সেখানে গ্রেনেড হামলার শিকার হয়ে নিহত হয়েছিল আমাদের আওয়ামী লীগের আইভি রহমানসহ ২২ জন নেতাকর্মী এবং দুজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি। আহত হয়েছিল শত শত নেতাকর্মী।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রধান বিরোধী দলের সন্ত্রাসবিরোধী একটি সভায় যে এ ধরনের প্রকাশ্য দিবালোকে গ্রেনেড হামলা হতে পারে, তার নজির বিশ্বে সম্ভবত আর কোথাও নেই।’

অনুষ্ঠানের শুরুতে ফুলের তোড়া দিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল গণভবনে শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী মহোৎসব উপলক্ষে ঢাকা মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ছবি : বাসস

অনুষ্ঠানে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান এবং বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ, মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট ও হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের মধ্যে মিলন কান্তি দত্ত, নির্মল কুমার চ্যাটার্জি, শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার, অ্যাডভোকেট কিশোর রঞ্জন পাল, বিমল কান্তি দে, মুক্তিযোদ্ধা গৌরাঙ্গ দে, দেবাশিষ পালিত ও সুব্রত পাল বত্তৃদ্ধতা করেন। অনুষ্ঠানে সারা দেশ থেকে আসা হিন্দু পুরোহিত ও মহারাজসহ সনাতন ধর্মাবলম্বীরা উপস্থিত ছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাই নয়, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর দেশ সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছিল এবং সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক, অস্ত্র চোরাচালানসহ বহু ঘটনাই সে সময় ঘটেছে।

প্রধানমন্ত্রী ২০০১ সালের নির্বাচনের পর সারা দেশে বিএনপি-জামায়াতের সীমাহীন সন্ত্রাস-নৈরাজ্য, সংখ্যালঘু এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, কি হিন্দু-খ্রিস্টান, কি মুসলিম, কি বৌদ্ধ—কোনো ধর্মের মানুষই তাদের সন্ত্রাস থেকে রেহাই পায়নি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর আমরা সে অবস্থা থেকে দেশকে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে এসেছি, যেখানে সকল ধর্মের মানুষ শান্তিতে তাদের ধর্মকর্ম করতে পারছে।’

দেশে প্রতিবছর ক্রমবর্ধমান পূজামণ্ডপের সংখ্যার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা এমন একটা অবস্থায় দেশকে আনতে পেরেছি, যেখানে প্রতিটি উৎসবই আনন্দমুখর পরিবেশে উদ্যাপিত হচ্ছে। কারণ আমাদেরও স্লোগান ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’।” এ দেশে আর কেউ যেন কোনো দিন সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেছেন তিনি। তাঁর সরকার ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সবার সম-অধিকারে বিশ্বাসী উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাও নিজেদের অধিকার নিয়ে চলবেন, কারণ এই দেশটা আপনাদেরও।’

সরকারপ্রধান হিসেবে সবার সম-অধিকার নিশ্চিত করা তাঁর কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতারও মূল লক্ষ্য ছিল সব ধর্মের মানুষ এ দেশে তার সমান অধিকার নিয়ে বাঁচবে। এ জন্যই জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে সবাই রক্ত দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এ দেশের স্বাধীনতা এনেছিল।

প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি ধর্মের জন্য ট্রাস্ট ফান্ড গঠন, পুরোহিত প্রশিক্ষণ, সারা দেশে মন্দির-উপাসনালয় সংস্কারে তাঁর সরকারের ২০০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ, হিন্দু নারীদের পিতার সম্পত্তির ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠা, হিন্দু বিয়ে রেজিস্ট্রি বাধ্যতামূলক এবং অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন পাসে তাঁর সরকারের উদ্যোগগুলো তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী মানবিক কারণে ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে এ দেশে আশ্রয় প্রদানে তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরেন।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, মানুষের যাতে অর্থনৈতিক মুক্তি মেলে, দুবেলা দুমুঠো পেট ভরে খেতে পারে, রোগে চিকিৎসা ও উন্নত জীবন পায়—তা নিশ্চিত করার জন্যই জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর ছয় বছর প্রবাসজীবন শেষে ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ তাঁকে সভাপতি নির্বাচিত করলে তিনি জোর করেই দেশে ফিরে আসেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছোট ছোট শিশুদের মাতৃস্নেহবঞ্চিত করে চলে এসেছিলাম। তাদের হোস্টেলে রেখেছি। বোনের কাছে রেখেছি। কারণ লক্ষ্য নির্দিষ্ট ছিল—এ দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। যে লক্ষ্য বাস্তবায়নে এখনো দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, দুষ্টের দমন এবং শিষ্টের পালনের জন্যই শ্রীকৃষ্ণ এ ধরায় এসেছিলেন। সব ধর্মেরও মূল কথা ওই একই—মানুষের কল্যাণ করা। একটি দেশের উন্নয়নে সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী দেশকে তিনি বর্তমানে যে পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন, তা থেকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

মানবধর্মই সব থেকে বড় ধর্ম উল্লেখ করে শেখ হাসিনা দেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে সবাইকে একযোগে কাজ করারও আহ্বান জানান। আগামী ২ সেপ্টেম্বর শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন বা জন্মাষ্টমী উৎসব উদ্যাপিত হবে।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top