Monday , 13 May 2024
সংবাদ শিরোনাম

ফলাফল জিপিএ-৫, আর কি পড়া হবে চানাচুর বিক্রেতার ছেলের

বাবা ফুটপাতে চানাচুর বিক্রি করেন। শরীয়তপুরের ডামুড্যায় এক শতকের ভিটাবাড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই তাঁর। সেই মা-বাবার তৃতীয় সন্তান আল আমিন এবার এইচএসসি পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডে ব্যবসা শিক্ষা বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। অভাব-অনটন আর দুঃখ-কষ্টের ভেতর চলতে থাকা পরিবারে এখন আনন্দের জোয়ার। ডামুড্যা উপজেলায় একমাত্র একটি জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছেলে সে। শিক্ষক থেকে শুরু করে তার সহপাঠীদের গর্বের ধন হয়ে উঠেছে আল আমিন।

উপজেলার কনেশ্বর ইউনিয়নের সৈয়দবস্ত গ্রামের হতদরিদ্র খোরশেদ ফকির ও আলেয়ার পাঁচ সন্তানের মধ্যে তৃতীয় আল আমিন। লেখাপড়ার পাশাপাশি বাবার চানাচুর বিক্রির কাজেও সহায়তা করতেন আল আমিন।

হতদরিদ্র চানাচুর বিক্রেতা খোরশেদ আলমের এক ছেলে আর চার মেয়ে। তাদের ঠিকমতো সংসার চলে না। ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারেনি তার পরিবার। তবে আল আমিনের নিজের প্রচেষ্টায় এবং শিক্ষকদের সহযোগিতায় লেখাপড়া চালিয়ে যায়। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর প্রচেষ্টায় উচ্চ মাধ্যমিকে এই ফল। অভাবের কারণে ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবে কি না তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে সে।

পূর্ব মাদারীপুর কলেজ থেকে সে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। জেএসসি ও এসএসসিতেও জিপিএ ৫ পেয়েছিল আল আমিন। পরিবারের শত দুঃখ-কষ্ট, বাধা-বিপত্তি তাকে লেখাপড়া থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। তার প্রবল ইচ্ছাশক্তির কাছে হার মানতে হয় সব বাধাকে। পিএসসি ও এসএসসিসহ বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠানের দেওয়া আর্থিক অনুদানেই চলেছে তার পড়াশোনার খরচ।

এইচএসসির ফলাফল শুনে কেঁদে ফেলেন আল আমিন। আনন্দের অশ্রু মুছে আল আমিন বলে, ‘আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে মানুষের মতো মানুষ হতে চাই। কিন্তু উচ্চ শিক্ষার খরচ কিভাবে জোগাব তা মাথায় আসছে না। মা-বাবার টানাটানির সংসারে আমি আরেক বোঝা। ভবিষ্যতে আমি তাদের দুঃখ-কষ্ট ঘোচাতে চাই। বড় হয়ে আমি বড় ব্যবসায়ী হবো। তাই আমি ফিন্যান্স নিয়ে পড়তে চাই।

আল আমিনের বাবা খোরশেদ আলম বলেন, ‘ছেলের রেজাল্টে আমি অনেক খুশি। অভাবের কারণে আল আমিনকে সবার মতো ভালো করে পড়ালেখার খরচ দিতে পারিনি, ভালো পোশাক কিনে দিতে পারিনি। পারিনি দুই বেলা দুই মুঠো ভালোভাবে খেতে দিতে। টাকার অভাবে তাকে আমরা বইও কিনে দিতে পারেনি।’

আল আমিনের মা আলেয়া বলেন, ‘সংসার ঠিকমতো না চললেও ছেলেকে উচ্চশিক্ষা দেওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। সে লেখাপড়া ভালো করছে। পড়াশোনার খরচ যোগাতে আমারা হিমশিম খেতাম। ওর উপবৃত্তির টাকায় পড়াশোনা চলতো। আল আমিন রাতে বেশি পড়ার সুযোগ পেতো না। বিদ্যুতের বিল বা হারিকেন তেল যাবে বিধায় দিনে বেশি বেশি পড়ত। অভাবের সংসার যা হয় আর কি। ভালো ফলাফলের জন্য তার শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমার ছেলের পড়ালেখার জন্য শিক্ষকরা অনেক সহযোগিতা করেছেন। বিনা পয়সায় তাকে প্রাইভেট পড়িয়েছেন’।

আল আমিনের সহপাঠী সানিয়া আফরোজ নাম্মী বলেন, ‘আল আমিনের ইচ্ছাশক্তির কাছে দরিদ্রতা হার মেনেছে। পড়াশোনা ছাড়া কিছুই বুঝতো না। সে ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে পড়াতো’।

পূর্ব মাদারীপুর কলেজের অধ্যক্ষ জহিরুল্লাহ বলেন, ‘কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায়, নিয়মানুবর্তিতা আর ইচ্ছাশক্তি দিয়ে যে সবকিছু অর্জন করা যায়, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আল আমিন। তাকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা করতে পারলে সে দেশ ও জাতির সেবায় আত্মনিয়োগ করতে পারবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস’।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top