Friday , 3 May 2024
সংবাদ শিরোনাম

হজে যাওয়ার আগে করণীয়

পবিত্র কোরআনের ভাষ্য মতে, ইসলামী সনের তিনটি মাস হলো হজের জন্য। হাদিসে সেই তিন মাসের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে—শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ। হজের মূল কাজগুলো জিলহজ মাসে সম্পাদিত হলেও আগের দুই মাসকে হজের মাস এ জন্য বলা হয়েছে, যাতে হজ আদায়ে ইচ্ছুক লোকেরা হজের প্রস্তুতি নিতে পারে। সেই হিসেবে এ বছর আল্লাহর যেসব প্রিয় বান্দা ও বান্দি হজে যাওয়ার নিয়ত করেছেন, তাঁদের প্রস্তুতি পর্বে সহায়ক হবে, এমন কতগুলো বিষয় এখানে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হলো—

এক. আল্লাহ তাআলার কৃতজ্ঞতা আদায় করা। হজে যাওয়ার সার্বিক সামর্থ্য ও সক্ষমতা লাভ করা একমাত্র আল্লাহর অনুগ্রহ ও নেয়ামত। অনেক মানুষ হজ করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা বুকে নিয়েই কবরে চলে যান। সুতরাং এই মহান সৌভাগ্য ও নেয়ামতের ওপর আল্লাহ তাআলার একনিষ্ঠ শুকরিয়া আদায় করা একান্ত কর্তব্য।  আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যদি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করো, তাহলে তোমাদের আরো বাড়িয়ে দেব।’ (সুরা ইবরাহিম : ৭) অন্যত্র বলেন, ‘আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো; অকৃতজ্ঞ হয়ো না।’ (সুরা বাকারা : ১৫২)

দুই. হজ ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম একটি। অতএব, হজ আদায়ে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে সেই মহান কর্মের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও মর্যাদা বোঝার চেষ্টা করা উচিত। হজের ভেতর শরিয়তের অনেক মৌলিক বিষয় শামিল। আল্লাহ তাআলা নবী ইবরাহিম (আ.)-কে বলেছিলেন, ‘মানুষের মধ্যে হজের জন্য ঘোষণা প্রচার করো। তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সর্বপ্রকার কৃশকায় উটের পিঠে সওয়ার হয়ে দূর-দূরান্ত থেকে। যাতে তারা তাদের কল্যাণের স্থান পর্যন্ত পৌঁছে এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে তাঁর দেওয়া চতুষ্পদ জন্তু জবেহ করার সময়।’ (সুরা হজ : ২৭-২৮)

তিন. হজের সফর শুরু করার আগেই প্রিয় নবী (সা.)-এর এই হাদিস মনোযোগ সহকারে পাঠ করে নেওয়া। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি (সা.) ইরশাদ করেন, ‘এক ওমরাহ পরবর্তী ওমরাহ পর্যন্ত (সগিরা) গুনাহগুলো মুছে দেয় আর হজে মাবরুরের প্রতিদান জান্নাত বৈ কিছু নয়।’ (বুখারি : ১৬৮৩, মুসলিম : ১৩৪৯)

এই হাদিস সামনে রেখে হজ আদায়ে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে যে হজে মাবরুর কী? নিজের হজকে কিভাবে হজে মাবরুরে রূপান্তরিত করা যায়? বস্তুত হজে মাবরুরের সংজ্ঞা জেনে তা কিভাবে অর্জিত হয়, সেই ব্যবস্থা এখন থেকেই গ্রহণ করতে শুরু করা। উল্লেখ্য, হজে মাবরুরের সংজ্ঞা নিয়ে একাধিক অভিমত পাওয়া যায়। যেমন—সব রকম লোকদেখানো, অহংকার প্রদর্শন, অন্যায় ও পাপাচার থেকে মুক্ত হজ। কারো মতে, মকবুল বা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হজ আর কারো ব্যাখ্যায়, যে হজের পর মানুষ আগেকার সব ধরনের অবৈধ কর্ম ও গুনাহ থেকে নিবৃত্ত হয়ে যায়, সেটাই হজে মাবরুর। (ফাতহুল বারি)

ফলত, হজে গমনে ইচ্ছুক ব্যক্তির জন্য উচিত হজে যাওয়ার আগেই সমূহ গুনাহ থেকে আল্লাহ তাআলার কাছে খালেস দিলে তাওবা করা এবং মানুষের কোনো প্রাপ্য থেকে থাকলে তা আদায় করা কিংবা নিতান্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি থেকে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া।

চার. নিয়ত শুদ্ধ করে নেওয়া। ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘প্রতিটি আমল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।’ (বুখারি : ১) সুতরাং এটি নিশ্চিত করতে হবে যে হজ শুধু আল্লাহ তাআলার হুকুম পালন ও তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য, পার্থিব কোনো গরজ এর পেছনে থাকতে পারে না। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তাদের এ ছাড়া কোনো নির্দেশ করা হয়নি যে তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে।’ (সুরা বায়্যিনা : ৫)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘অতএব যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরিক না করে।’ (সুরা কাহফ : ১১০)

তাফসিরবিদ আলেমরা বলেন, ‘সৎকর্ম’ বলে এমন আমল বোঝানো হয়েছে, যা একমাত্র আল্লাহর জন্য সম্পাদন করা হয় এবং সেটি সুন্নাহসম্মত হয়।

পাঁচ. আর্থিক, শারীরিক ও হজের সফরের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণের পাশাপাশি আরেকটি বিষয়ের প্রতি খুবই গুরুত্বারোপ করতে হবে। সেটি হলো, হজের মাসায়েল সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন করা। হজ যেমন ফরজ, তেমনি হজ আদায়ে অতীব প্রয়োজনীয় মাসায়েল জানাও ফরজ। হজের মোবারক সফরে কখন, কোথায় কোন কর্ম সম্পাদন করতে হবে, তা সঠিকভাবে জেনে নেওয়া। হজের প্রকারভেদ, করণীয় ও বর্জনীয়—এসব বিষয় অবশ্যই বুঝতে হবে এবং সেই মোতাবেক আমল করতে হবে। নতুবা সেই হজ একটি সাধারণ ভ্রমণ ছাড়া কোনো কাজে আসবে না। সে জন্য এখন থেকেই এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া দরকার। আলেমদের শরণাপন্ন হওয়া, বিভিন্ন হজ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করা এবং সম্ভব হলে হজের সফরে আল্লাহওয়ালা বিজ্ঞ কোনো আলেমের সাহচর্য লাভের চেষ্টা করা। এতে মাসায়েল শেখার পাশাপাশি আল্লাহর নৈকট্য লাভের পথ ও পদ্ধতিগুলো কাজেকর্মে বাস্তবায়নের প্রশিক্ষণ হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা তাওফিক দান করুন। আমিন।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top