Saturday , 4 May 2024
সংবাদ শিরোনাম

তাঁরা বাড়ি যাবেন

গত রবিবার দুপুর ১২টা। স্টেশনে অনেক মানুষ। কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইন। কম করেও শখানেক করে মানুষ একেক লাইনে। মধ্যরাতেও এসেছেন কেউ কেউ। কেউ বা সাহরি খাওয়ার পর আর দেরি করেননি। সময় যায়, লাইন বড় হয়। প্রাকৃতিক প্রয়োজন পেলে পেছনের লোককে বলে যাচ্ছেন, ‘এই আসছি ভাই, জায়গাটা রাইখেন।’

যাঁদের এর মধ্যে পা ব্যথা হয়ে গেছে, তাঁদের কেউ কেউ একটা পেপারের ওপর বসে আরেকটা পড়ছেন। কয়েকজন আবার চাটাই বিছিয়ে বসে পড়েছেন। গল্প করছেন দেশ-বিদেশ, রাজনীতি-অর্থনীতি, সমাজ-সংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয়ে। দু-একজনকে দেখলাম মোড়া নিয়ে এসেছেন। অনেকেরই এর মধ্যে ১২ ঘণ্টা পার হয়েছে। দরকার হলে আরো ১২ ঘণ্টা অতিবাহিত করবেন; কিন্তু টিকিট না নিয়ে
ফিরবেন না।

প্রথমেই পেলাম হাফিজ আলীকে। একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কম্পানির অফিসার। হাজারীবাগ থাকেন। দিনাজপুরের পার্বতীপুর থানায় বাড়ি। রাত ১টায় এসেছেন। একজনকে জায়গা রাখতে বলে এখন একটু পায়চারি করে নিচ্ছেন। আগের ঈদে বাড়ি গেছেন আর এ-ই যাবেন। বললেন, ‘অপেক্ষায় থাকি কখন ঈদ আসবে, কবে বাড়ি যাব। মায়ের সঙ্গে ঈদ করব। বাবা, আমি আর আমার ছেলে একসঙ্গে ঈদগাহে যাব। বাবার সঙ্গে ঈদগাহে যাওয়া আমার জীবনের সেরা ঘটনা বলতে পারেন। তাই যে করে হোক, ঈদে বাড়ি যাই।’

তিতুমীর কলেজে বিবিএ করছেন মো. ইমন। নওগাঁয় বাড়ি। ১২ জুনের টিকিট পেয়েছেন। সাড়ে পাঁচ মাস পর বাড়ি যাচ্ছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করেন। বললেন, ‘তিন মাস হয় ভাইয়ের বিয়ে হয়েছে। নতুন ভাবি দেখা হয়নি। ঈদে বাড়ি গেলে প্রথম দেখব। এবার মায়ের জন্য একটি শাড়িও কিনেছি। মা হয়তো ভাবিকেই দিয়ে দেবেন। সেটাই খুশির ব্যাপার হবে।’ ইমনের বন্ধু কাজি সৈকতও তিতুমীর কলেজে পড়েন। টিকিট পেয়ে মহাখুশি। বললেন, ‘বাড়িতে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতেই বেশি ভালো লাগে।’

মোহাম্মদ তোয়াহা যাত্রাবাড়ী বড় মাদরাসার ছাত্র। সাহরি খেয়েই চলে এসেছেন। জামালপুর যাবেন। বললেন, ‘আমাদের বাড়িতে নতুন অতিথি এসেছে। বড় ভাইয়ের মেয়ে হয়েছে। তাকে নিয়েই এবার আমাদের ঈদ হবে।’

খুলনায় যাবেন আবু বকর। ঢাকার লালবাগে থাকেন। একটা মোড়া নিয়ে এসেছেন। মোড়ায় বসেই লাইন ধরেছেন।

পাবনায় মোহাম্মদ কাজিম উদ্দিনের বাড়ি। থাকেন নারায়ণগঞ্জ। সার ব্যবসায়ী। রাত ৩টায় এসেছেন কমলাপুর। ধারণা করছেন আর আধা ঘণ্টার মধ্যেই কাউন্টারে পৌঁছে যাবেন। পরিবার তাঁর বাড়িতেই থাকে। ছেলে-মেয়েদের ছাড়া ঈদ করার কথা ভাবতেও পারেন না। প্রতি ঈদেই বাড়ি যান।

মাহমুদুল হাসান সৈকত আশকোনা স্কুলের ছাত্র। বড় আপুর বাসায় থেকে পড়াশোনা করে। সিরাজগঞ্জে বাড়ি। ছয় মাস পর বাড়ি যাচ্ছে। বলল, ‘বাড়ির জন্য মন কাঁদে। ফোনে মাকে বলেছি, আমি আসছি। ঈদের দিন মাকে নিয়ে নানিবাড়ি যাব।’

মুফতি আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মাদরাসার শিক্ষক। সিলেটে বাড়ি। অল্প দিন হলো বিয়ে করেছেন। নতুন বউয়ের সঙ্গে এবারই প্রথম ঈদ। বাড়িতে মা-বাবাও আছেন। বললেন, কোরবানি ঈদে বাড়ি যাওয়ার সুযোগ হয় না। আমরা মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক তখন চামড়া কালেকশনে ব্যস্ত থাকি। রোজার ঈদেই সুযোগ হয় বেশি। পরিবারের লোকও অপেক্ষায় থাকে।’

শাফিনা ঋতু স্বামীসহ যাবেন এবার বাবার বাড়ি চট্টগ্রামে। অনেক বছর পর বাবার বাড়ি ঈদ করতে যাচ্ছেন। বললেন, ‘বাবার বাড়িতে ঈদ করব, ভাবতেই ভালো লাগছে। বাবা যদিও নেই; কিন্তু মা আছেন। ভাইয়েরা আছেন। সবার সঙ্গে অনেক দিন পর ঈদ করব। বিয়ের পর মেয়েদের জন্য এটা বড় ব্যাপারই বলতে পারেন।’

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top