Saturday , 18 May 2024
সংবাদ শিরোনাম

সিরিয়া ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা কতটা

সিরিয়া-ইসরাইলের মধ্যে বিরোধী অনেক পুরনো। দুই দেশের মধ্যে অনেকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। তবে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সুযোগে সেখানে প্রভাব বাড়ছে ইরান আর হিজবুল্লাহর, যা উদ্বিগ্ন করে তুলেছে ইসরাইলকে।

সম্প্রতি সেখানে পরস্পরের বিমান ভূপাতিত করার মতো ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সেখানকার এই উত্তেজনা কি আরও বড় আকারে রূপ নিতে পারে?

এক দশক আগে পূর্ব সিরিয়ার আকবর সামরিক কেন্দ্রে যে বোমা হামলা চালিয়েছিল ইসরাইলি ফাইটার জেট, এত বছর ধরে তা অস্বীকার করার পর এখন তারা স্বীকার করেছে। সেখানে একটি পারমাণবিক চুল্লি ছিল বলে মনে করা হতো।-খবর বিবিসি অনলাইন।

কিন্তু এত বছর পর কেন এখন এই স্বীকারোক্তি?

ইসরাইলি চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল গ্যাডি আইজেনকট বলছেন, ২০০৭ সালে সিরিয়ায় ওই হামলা চালানোর উদ্দেশ্যে এই বার্তা দেয়া হয় যে, ইসরাইল এই অঞ্চলে এমন কোনো কর্মকাণ্ড সহ্য করবে না, যা আমাদের দেশের অস্তিত্বকে হুমকিতে ফেলতে পারে।

১৯৯৮ সালে আমরা যখন ইরাকের আণবিক কেন্দ্রে বোমা হামলা করি, তখনও এই বার্তাই দিতে চেয়েছি। ভবিষ্যতেও আমাদের শত্রুদের এ বার্তাই দেয়া হবে।

ইসরাইলি গণমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে যে, সিরিয়ায় নানা কর্মসূচির সঙ্গে ইরানের যোগাযোগ রয়েছে। ইরানের সহায়তায় সিরিয়া আণবিক অস্ত্র বানাতে পারে বলে ইসরাইলের আশঙ্কাও বেড়েছে।

সম্প্রতি সিরিয়ায় সরকারি আর ইরানি লক্ষ্যবস্তুতেও হামলা চালিয়েছে ইসরাইল।

ইসরাইলি প্রতিরক্ষাবিষয়ক একটি সাময়িকীর বিশ্লেষক অ্যামে সারেল বলেন, সাত বছর ধরে সিরিয়ার সংঘাত থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেছে ইসরাইল, কিন্তু এখন সে জড়িয়ে পড়ছে।

তিনি বলেন, এখন যুদ্ধের ভিন্ন একটা অধ্যায় শুরু হয়েছে। সত্যি কথা বলতে- আসাদ সরকার এই যুদ্ধে জয়ী হতে চলেছে। কিন্তু যারা আসাদকে জয়ী হতে সহায়তা করেছে, তারা ইসরাইলের জন্য হুমকি হতে পারে।

বিশেষ করে এই অঞ্চলে ইরানের উপস্থিতি বাড়ছে, তাদের মিলিশিয়ারা নানা ঘাঁটি তৈরি করে থাকছেন। ইসরাইলের জন্য আরেকটি বড় হুমকি হতে পারে হিজবুল্লাহ।

সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর সঙ্গে মিলে বিদ্রোহী বাহিনী আর ইসলামিক স্টেট গ্রুপের বিরুদ্ধে লড়াই করছে হিজবুল্লাহও। যুদ্ধে তারা শত শত যোদ্ধাও হারিয়েছেন।

তবে বৈরুতের কার্নেগি মধ্যপ্রাচ্য কেন্দ্রের মোহাম্মেদ হেজালি বলছেন, যোদ্ধা হারালেও এই যুদ্ধে হিজবুল্লাহর সামরিক শক্তি আসলে অনেক বেড়েছে।

হেজালি বলছেন, হিজবুল্লাহ তাদের শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করেই চলেছে এবং নতুন নতুন অস্ত্রের ব্যবহারের চেষ্টা করছে। সিরিয়ার যুদ্ধে তারা তাদের সমরশক্তি ব্যবহার করেই তারা অভিজ্ঞতা অর্জনের চেষ্টা করছে। তারা সেখানে অন্য ছোট গ্রুপগুলোকে প্রশিক্ষণও দিচ্ছে, যারা সিরিয়ায় তাদের প্রভাব বিস্তারে দীর্ঘদিন কাজ করবে।

আর এটিই ইসরাইলকে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। তারই প্রতিফলন ঘটেছে সিরিয়ায় সাম্প্রতিক এসব হামলায়। এর আগেও তারা অনেকবারই সিরিয়ায় অভ্যন্তরে হামলা চালিয়েছে।

তাদের দাবি, ইরান যাতে হিজবুল্লাহকে শক্তিশালী করতে না পারে, তাই তাদের এসব পদক্ষেপ। যদিও হিজবুল্লাহ নেতা শেখ নাইম কাসেম একে যুদ্ধ হিসাবেই নিয়েছেন।

তিনি বলছেন, আমি পরিষ্কারভাবে বলছি- যে কোনো হামলা ঠেকাতে হিজবুল্লাহ সবসময়েই প্রস্তুত আছে। যদি ইসরাইল কখনও সে রকম ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, তা হলে তার উপযুক্ত জবাব দেয়া হবে। তবে আমার মনে হয় না, তারা একটি যুদ্ধে জড়ানোর মতো অবস্থায় আছে।

তবে বিপদ লুকিয়ে আছে নানা ঘটনার মধ্যে।

ইসরাইলি আকাশসীমায় একটি ইরানি ড্রোন ভূপাতিত করার পর সিরিয়ায় হামলা করে ইসরাইল, যেখানে তাদেরও একটি ফাইটার জেট ভূপাতিত হয়। এর পর সিরিয়ার কিছু লক্ষ্যবস্তুতে পাল্টা হামলা করে ইসরাইল।এসব কিছুই আশঙ্কা তৈরি করছে যে, দেশটির রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ হয়তো যে কোনো সময় একটি পুরোদস্তুর আঞ্চলিক যুদ্ধেও মোড় নিতে পারে।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top