Friday , 3 May 2024
সংবাদ শিরোনাম

বিএনপির প্রার্থী খালেদা জিয়া ১৪ দলীয় জোটে হযবরল

ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলা নিয়ে ফেনী-১ আসনে বইছে নির্বাচনী আবহ। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠে সক্রিয়। যোগ দিচ্ছেন সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে। অনেকে আবার ভোট কেন্দ্রভিত্তিক পুলিং এজেন্টদের তালিকা তৈরির কাজও শেষ করার দাবি করেছেন। ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ছবি সংবলিত ব্যানার ঝুলছে মোড়ে মোড়ে।

আসনটি মূলত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার। নব্বইয়ের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জাতীয় সংসদের প্রতিটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোটে খালেদা জিয়া বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। আগামী নির্বাচনেও দলের এই হেভিওয়েট প্রার্থী জোটের একমাত্র প্রার্থী। টানা পাঁচবার বিপুল ভোটে ফেনী-১ আসন থেকে বিজয়ী হন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। নানামুখী চাপে কোণঠাসা বিএনপি কোন্দল ও গ্রুপিংয়ে জড়িয়ে পড়লেও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে সব কোন্দল দূর হয়ে যাবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

২০১৪ সালের ভোটে বিজয়ী ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার বিজয়ী হন। ক্লিন ইমেজের এ নেত্রী জোটের প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। প্রায় এক যুগ ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকায় অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর মামলা-হামলার ভারে কোণঠাসা বিএনপি এরই মধ্যে সব উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ ভোটের লড়াইয়ে হাতছাড়া হয়েছে। তবে আগামী নির্বাচনে আসন পুনরুদ্ধারে আশাবাদী দলটির নেতারা।ক্ষমতাসীন আ’লীগ ও ১৪ দলীয় জোটের অবস্থা হযবরল। আ’লীগ ও জোটের একাধিক নেতা চষে বেড়াচ্ছেন মাঠ। জেলা আ’লীগের প্রধান উপদেষ্টা আলাউদ্দিন চৌধুরী নাসিম দলীয় মনোনয়ন তালিকায় শীর্ষ রয়েছেন। এছাড়া আ’লীগের প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন জেলা আ’লীগের সহসভাপতি খায়রুল বাশার মজুমদার তপন, জেলা কমিটির সদস্য শেখ আবদুল্লাহ, ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাট, ছাগলনাইয়া উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল, পরশুরাম পৌরসভার মেয়র নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সাজেল এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আ’লীগের সহসভাপতি ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্লাহ নির্বাচনী মাঠে সক্রিয়। খায়রুল বাশার তপন ভোট কেন্দ্রভিত্তিক দায়িত্ব পালনকারী পুলিং এজেন্টদের তালিকা তৈরির কাজও শেষ করার দাবি করেছেন।

জন্মভূমি হওয়ায় ফেনীর মানুষের কাছে খালেদা জিয়ার অন্যরকম গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। প্রতিবার একাধিক আসন থেকে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করলেও ফেনী-১ আসনটি ছিল কমন। ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর আসনটি খালেদা জিয়া তার ভাই সাঈদ এস্কান্দারকে ছেড়ে দিলেও ১৯৯১ ও ৯৬ সালে বিজয়ী হওয়ার পর তিনি আসনটি রেখে দেন। জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেত্রী ও সাবেক এমপি রেহানা আক্তার রানু জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও খালেদা জিয়া এ আসনে প্রার্থী হবেন। পরশুরাম পৌরসভার সাবেক মেয়র উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব জানান, আগামী নির্বাচন ঘিরেও দলীয় নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন।

বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, বর্তমানে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত। অভিযোগ রয়েছে- জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি খালেদা জিয়ার ছোট ভাই মেজর (অব.) সাঈদ এস্কান্দার সমর্থিত একটি গ্রুপ ও সাবেক এমপি ও দলের সাধারণ সম্পাদক নেতৃত্বাধীন একটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহপ্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রেহানা আক্তার রানু এবং দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে আলাদা গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে দলের তৃণমূলেও। গুঞ্জন রয়েছে, দলের শহরে অবস্থানকারী একটি অংশ স্থানীয় আ’লীগের সঙ্গে আঁতাত করে রাজনীতি করছেন। এরাই এখন কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন কাজের ঠিকাদারিও করছেন। এ অবস্থায় আগামী নির্বাচনে বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীরা মাঠে নামবেন কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এ আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী মাঠে নেমে পড়েছেন। ২০১৪ সালে এ আসনে খায়রুল বাশার মজুমদার তপনকে মনোনয়ন দেয় ১৪ দল। শেষদিকে আ’লীগ প্রার্থী বদল করে জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতারকে মনোনয়ন দিলে তিনি বিনা ভোটে এমপি হন। তবে এরই মধ্যে আ’লীগের স্থানীয় নেতারা কেন্দ্রকে জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে অন্য দলের প্রার্থীকে তাদের পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব হবে না। যদিও জেলা জাসদ নেতাদের দাবি, সাধারণ মানুষ শিরিনকে ক্লিন ইমেজের নেত্রী মনে করে। তিনি চার বছর নিরলসভাবে এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছেন। আগামীবারের মনোনয়ন তারই প্রাপ্য। বর্তমান এমপি শিরিন আখতারও জোটের মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী। তিনি বলেন, চার বছরে অসংখ্য গ্রামে গিয়ে নারীদের সংগঠিত করেছি। গ্রামের নারী ভোটারদের নিয়ে উঠান বৈঠক করেছি।

কথিত আছে- ফেনী জেলা আ’লীগের নিয়ন্ত্রণ এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক সহকারী একান্ত সচিব আলাউদ্দিন চৌধুরী নাসিমের হাতে। মনোনয়ন দেয়ার ব্যাপারেও জেলায় তার বড় ভূমিকা থাকবে বলে মনে করছেন অনেকেই। স্থানীয় নেতাদের অনেকেই ফেনী-১ আসনে আ’লীগের প্রার্থী হিসেবে আলাউদ্দিন নাসিমকে চাচ্ছেন। এ ব্যাপারে নাসিমের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। তবে পরশুরাম উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল মজুমদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ফেনী-১ আসন থেকে দলের প্রার্থী হিসেবে আলাউদ্দিন নাসিমকেই চাচ্ছি। কথা হয় জেলা আ’লীগ সভাপতি আবদুর রহমান বিকমের সঙ্গে। তিনি বলেন, দলের ওপর নাসিমের প্রভাব অনেক। কেবল ফেনী-১ নয়, ফেনীর ৩টি আসনে প্রার্থী মনোনয়নে তার হস্তক্ষেপ থাকবে। তবে কয়েক মাস আগে নিজের প্রতিষ্ঠিত কলেজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা দেন। তবে নাসিমবিরোধী হিসেবে তিন উপজেলার নেতারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আলাউদ্দিন নাসিম ফেনী জেলা আ’লীগের প্রাণপুরুষ হয়ে থাকতে চান, নির্বাচনী চ্যালেঞ্জের ঝুঁকি নিতে তিনি রাজি নন বলে মনে হয়। তবে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে আলাউদ্দিন নাসিমের আস্থাভাজন খায়রুল বাশার মজুমদার তপন বা তার ভাই ব্যাংকার জালালউদ্দিন পাপ্পুকেও দেয়ার কথা ভাবতে পারেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আ’লীগের মনোনীত প্রার্থী জেলা কমিটির সহসভাপতি খায়রুল বাশার মজুমদার তপন যুগান্তরকে বলেন, গত নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুরোধে শিরিন আক্তারকে আসনটি ছেড়ে দিই। এবার তিনি আর ছাড় দেবেন না। তবে আলাউদ্দিন চৌধুরী নাসিমকে মনোনয়ন দিলে তিনি সরে দাঁড়াবেন।

জেলা আ’লীগের সদস্য বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ফুলগাজী উপজেলা আ’লীগের প্রাণ হিসেবে খ্যাত শেখ আবদুল্লাহ নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় এলাকায় প্রায় সব অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। সপ্তাহে কম করে ২ দিন বিভিন্ন মসজিদে নামাজ আদায় করেন ও স্থানীয়দের খোঁজখবর নেন।

জানতে চাইলে আ’লীগ প্রার্থী মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল ও নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সাজেল বলেছেন, দলের পক্ষ থেকে এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা বর্তমান এমপি বা কোনো অতিথি পাখিকে আ’লীগ মনোনয়ন দিলে স্থানীয় নেতাকর্মীরা তা মেনে নেবেন না।

কথা হয় এমপি শিরিন আখতারের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, মনোনয়ন দেয়ার আগে এ ধরনের অভিযোগ সব সময় ওঠে। মনোনয়ন নিয়ে মাঠে নামলে সব বদলে যায়। ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে এ আসন থেকে মনোনয়ন দেয়ার ব্যাপারে একটি গ্রুপ কাজ করছে। প্রায় এক হাজার যুবক পাড়া-মহল্লায়, চায়ের আড্ডায় তার কর্মকাণ্ড তুলে ধরে আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন।

জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পাওয়ার দাবি করে দলের চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের উপদেষ্টা নাজমা আক্তার জানান, জোটগত না হলে দল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। এছাড়া জামায়াতে ইসলামও তাদের জেলা আমীর একেএম সামছুদ্দিন আহাম্মদ ও কেন্দ্রীয় নেতা দিদারুল আলম মজুমদার স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে নির্বাচনী মাঠে থাকবেন বলে জানা গেছে।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top