Sunday , 12 May 2024
সংবাদ শিরোনাম

অর্থনীতিতে পাঁচ ঝুঁকি

চলতি অর্থবছরে (২০১৭-১৮) মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনে সামষ্টিক অর্থনীতিতে পাঁচটি বড় ঝুঁকি রয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এ বছর বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৪ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে দাতা সংস্থাটি।

ঝুঁকিগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রথমত, আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হতে পারে, যা আর্থিক খাতকে চাপে ফেলবে। এটি মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে এবং রিজার্ভকে চাপে ফেলবে। দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সক্ষমতার ঘাটতি আর্থিক খাতকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে।

তৃতীয়ত, উচ্চমাত্রার খেলাপি ঋণ, আর্থিক খাতকে ইতিমধ্যে চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে এবং চতুর্থত, নাজুক বিনিয়োগ পরিস্থিতি, অর্থনীতিকে চাপের মধ্যে রেখেছে। পঞ্চমত, দুর্বল রাজস্ব আদায়, লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আদায় না হলে বাজেট বাস্তবায়নে চাপ তৈরি হবে। এ ছাড়া ব্যাংক খাতে কর্পোরেট সুশাসনের অভাব। এমনকি অতিরিক্ত তারল্যও অর্থনীতির জন্য এক ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। বিশ্বব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

মঙ্গলবার ওয়াশিংটন থেকে এটি প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত অর্থবছর ৭ দশমিক ২ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হলেও চলতি অর্থবছর দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাজনিত চ্যালেঞ্জ ও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় প্রবৃদ্ধি কমে আসতে পারে। সেই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতি অস্থিতিশীল হওয়ার কারণে রেমিটেন্স প্রবাহ কমে গেছে। এর ফলে বাংলাদেশ ও শ্রীলংকায় রেমিটেন্সনির্ভর ভোগব্যয় ও বিনিয়োগ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

তবে সম্প্রতি বেসরকারি বিনিয়োগ কিছুটা বেড়েছে, অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বেড়েছে এবং সরকারি বেতন বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে ২০১৯ সালে ৭ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে প্রবৃদ্ধি। উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছর বাংলাদেশে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, বিদায়ী বছরে ব্যাংকিং খাতের ভঙ্গুরতা ছিল, সেটা নতুন বছরে আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেসব প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার হওয়ার কথা বলা হয়েছে সেগুলো হওয়ার সম্ভাবনা নেই, অবকাঠামো সমস্যার আশু সমাধান নেই, তাছাড়া নির্বাচনী বছরের অনিশ্চয়তার কারণেও অর্থনীতি ঝুঁকির মধ্যে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে সামষ্টিক অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ বাড়তে পারে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। আবার নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দেশের অভ্যন্তরেও পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘিœত হতে পারে। সংস্থাটি আরও বলেছে, শিল্প উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি বাড়বে এবং সেবা খাতের উৎকর্ষ থাকবে। দুর্বল রফতানি প্রবৃদ্ধি, রেমিটেন্স কমে যাওয়া, আমদানি বেড়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে চলতি হিসাবে ঘাটতি বড় আকার ধারণ করবে। এ ছাড়া আর্থিক খাতের দুর্দিনও চলমান থাকবে।

সংস্থাটি জানিয়েছে, এ বছর বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ১ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার পর সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০১৬ সালে, মাত্র ২ দশমিক ৩ ভাগ। এ বছর উদীয়মান ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়ার আশা করছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বের বড় অর্থনীতির দেশগুলো আর্থিক উদ্দীপনামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করায় অর্থনীতির গতি বেড়েছে।

বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাঙ্গাভাব এবং বিশ্ব বাণিজ্যের সম্ভাবনাগুলো বিশ্লেষণ করে এমনটি আশা করছে বিশ্বব্যাংক। উদীয়মান বাজারগুলোর উন্নতি এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতির গতি বৃদ্ধি পাবার আশা করা হয়েছে। প্রতিবেদনে কিছু অনিশ্চয়তার দিক তুলে ধরা হয়েছে। বড় অর্থনীতির দেশগুলোর নীতি পরিবর্তন হলে এ প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

বড় দেশগুলোর বাণিজ্য নীতি পরিবর্তন হলে নিন্ম, মধ্য ও উচ্চ আয়ের দেশগুলো প্রভাবিত হতে পারে। প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতের প্রবৃদ্ধি কমে হবে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। অপরদিকে পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top