Monday , 13 May 2024
সংবাদ শিরোনাম

মোবাইল সম্পর্কে মনীষীদের সতর্কবার্তা

মোবাইল ফোন বা মুঠোফোন তারবিহীন টেলিফোনবিশেষ। মোবাইল অর্থ ভ্রাম্যমাণ বা স্থানান্তরযোগ্য। ফোন (phone) শব্দ এসেছে গ্রিক phônç  থেকে। এর অর্থ ধ্বনি, আওয়াজ, বক্তৃতা বা কথার শব্দ। (https://goo.gl/6ZwiUb)

মোবাইল সহজে যেকোনো স্থানে বহন ও ব্যবহার করা যায় বলে এ বিস্ময়কর প্রযুক্তিকে ‘মোবাইল’ নামকরণ করা হয়েছে। আর এর মাধ্যমে মানুষের উচ্চারিত শব্দ আদান-প্রদান হয় বলে ‘মোবাইল’ শব্দের সঙ্গে ‘ফোন’ শব্দও ব্যবহার করা হয়।

মার্টিন কুপার ও জন ফ্রান্সিস মিচেলকে প্রথম মোবাইল ফোনের উদ্ভাবকের মর্যাদা দেওয়া হয়ে থাকে। (https://goo.gl/TzuW2g)। মার্টিন কুপার ছিলেন একজন ইহুদি। (https://goo.gl/L79CTB)। অন্যদিকে জন ফ্রান্সিস মিচেল পারিবারিকভাবে খ্রিস্টান ছিলেন। (https://goo.gl/EPyXcF)

এতে কোনো সন্দেহ নেই যে মোবাইল ফোনের অনেক ইতিবাচক দিক আছে। মানুষের মধ্যে সহজ যোগাযোগ ও দূরত্ব ঘুচিয়ে আনতে মোবাইল ফোনের জুড়ি নেই। লেনদেন, ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে বিশ্বকে জানা ও বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে মোবাইলের জনপ্রিয়তা দিনদিন বাড়ছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও মানুষের জীবনে বহুমাত্রিক অকল্যাণ বয়ে আনছে এই যন্ত্র।

মোবাইল ব্যবহারে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি

মোবাইল ফোন ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। ইসরাইলের হাইফা বা হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের জরিপ মতে, উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯৪ ভাগ শিক্ষার্থী ক্লাসরুমেই মোবাইল ব্যবহার করছে। (https://goo.gl/MYuhra)

সিএনএনের গবেষণা মতে, ৫০ শতাংশ কিশোর ও ২৭ শতাংশ মাতা-পিতা মনে করেন, তাঁদের মধ্যে মোবাইল ফোন আসক্তির রূপ নিয়েছে। প্রায় ৮০ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী প্রতি ঘণ্টায় তাদের মোবাইল চেক করে। ৭২ ভাগ অনুভব করে যে অন্যের মেসেজের রিপ্লাই দেওয়া তাদের জন্য জরুরি।

(https://goo.gl/P0fh3U)

এর ফলে শিক্ষার্থীদের মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে। তাদের সৃজনশীল মেধা ধ্বংস হচ্ছে। মোবাইলের মাধ্যমে তারা পরীক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে। তারা পানাহারে অমনোযোগী হচ্ছে। ফলে স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিচ্ছে। আমেরিকার ভাইরাসবিজ্ঞানী ড. ডেবরা ডিভাস (Devra Divas)  তাঁর পিএইচডি থিসিসে দেখিয়েছেন, মোবাইল থেকে বের হওয়া তরঙ্গ রশ্মির কারণে শিশু-কিশোরদের স্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। (https://goo.gl/dovDym)

শিশুকালেই তাদের চোখ ও কানের সমস্যা প্রকট হচ্ছে। স্মৃতিশক্তি লোপ পাচ্ছে। তাদের মধ্যে একঘেয়েমি ও আত্মকেন্দ্রিকতা বাড়ছে। মোবাইলসংক্রান্ত বিষয়ে গবেষণা করে জাপানের ডকোমো ফাউন্ডেশন। ওই ফাউন্ডেশনের বরাতে আলজাজিরা ডটনেট লিখেছে, বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি দেশের জরিপ মতে, ৭০ শতাংশ শিশু অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের কারণে পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। (https://goo.gl/aQaPPx)

পাশাপাশি তাদের মধ্যে পর্নো-আসক্তি বাড়ছে।  ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’ এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশের রাজধানীতে ৭৭ শতাংশ স্কুলগামী শিক্ষার্থী পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়েছে। গ্রামীণফোনের অভিভাবক কম্পানি টেলিনরের এক জরিপে উঠে আসে, বাংলাদেশের প্রায় ৪৯ শতাংশ স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থী কোনো না কোনোভাবে সাইবার হুমকির শিকার। (সূত্র : কালের কণ্ঠ, ২৬-১০-২০১৬)

পরিবার ও সমাজবিচ্ছিন্নতা শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিত্ব গঠনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। তাদের মধ্যে ক্লাসের প্রতি মনোযোগিতা কমছে। মা-বাবার উপদেশ না মানার প্রবণতা বাড়ছে। দীর্ঘ সময় বসে থাকার কারণে তাদের পিঠ ও হাড়ে রোগ দেখা দিচ্ছে। ফলে পরিণত বয়সের আগেই তাদের বার্ধক্য পেয়ে বসছে। কান বেশির ভাগ সময় ব্যস্ত থাকায় চিন্তা ও মননে এর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। তাদের মধ্যে মানবিক গুণাবলি বিকাশের পরিবর্তে অমানবিকতা বাড়ছে। সঠিক সময়ে তারা ঘুম থেকে উঠতে পারছে না। তাদের মধ্যে বিকারগ্রস্ততা বাড়ছে।

(https://goo.gl/oppnp6)

১৮ মে ২০১৫ বিবিসি বাংলার একটি খবরের শিরোনাম হলো, ‘মোবাইল ফোন লেখাপড়ার জন্য ক্ষতিকর।’ সেখানে তারা লিখেছে, ‘স্কুলে মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ করার পর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফল ভালো হয়েছে বলে গবেষণায় দেখা গেছে। গবেষকরা বলছেন, এর ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনার জন্য বাড়তি সময় পেয়েছেন।

ইংল্যান্ডের চারটি শহরের স্কুলে জরিপ চালিয়ে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস এই সমীক্ষা প্রকাশ করেছে।’

মোবাইল ফোনে স্বাস্থ্যঝুঁকি

একাধিক গবেষণার ফলের বরাতে হাফিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুঠোফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারে শারীরিক ও মানসিক নানা সমস্যায় পড়ছেন ব্যবহারকারীরা। শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, মোবাইল ফোনে আসক্ত যেকোনো ব্যক্তি বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ২০১৪ সালে প্রচারিত তাদের এক জরিপে বলেছে, মোবাইল ফোন ক্যান্সারের কারণ। ২০১০ সালের ২৭ এপ্রিল টাইম ম্যাগাজিন এ বিষয়ে একটি আর্টিক্যাল ছেপেছে। তার শিরোনাম হলো, Health : A Cancer Muckraker Takes on cell phone. সেখানে তারা মাত্রাতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারে ক্যান্সার হওয়ার সমূহ সম্ভাবনার আশঙ্কা করেছে। (https://goo.gl/rb8J35)

যুক্তরাজ্যের চক্ষু বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে জানিয়েছেন, মুঠোফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারে দৃষ্টিবৈকল্য সৃষ্টি হতে পারে। এতে করে মায়োপিয়া বা ক্ষীণ দৃষ্টির সমস্যা দেখা দিতে পারে।

মুঠোফোন থেকে হাই ফ্রিকোয়েন্সির ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক রেডিয়েশন নির্গত হয়। এই ক্ষতিকর তরঙ্গের সঙ্গে মস্তিষ্কে ক্যান্সারের যোগসূত্র থাকতে পারে। এ ছাড়া শরীরের অন্য কোষকলা এই ক্ষতিকর তরঙ্গের প্রভাবে ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে পুরুষের প্রজননতন্ত্রেরও। গবেষকদের দাবি, মুঠোফোন থেকে নির্গত ক্ষতিকর তরঙ্গ শুক্রাণুর ওপর প্রভাব ফেলে এবং শুক্রাণুর ঘনত্ব কমিয়ে দিতে পারে। (‘মোবাইল ফোন যেসব ক্ষতি করছে!’, প্রথম আলো অনলাইন : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩)

মার্কিন গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, টয়লেটসিটের তুলনায় ১০ গুণ বেশি ব্যাকটেরিয়া থাকে মুঠোফোনে। মুঠোফোন নিয়মিত পরিষ্কার না করায় এটি জীবাণুর অভয়ারণ্য হয়ে ওঠে। গবেষকরা বলেন, মুঠোফোনে ব্যাকটেরিয়াগুলো ব্যবহারকারীর জন্য খুব বেশি ক্ষতিকারক না হলেও এটি থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে।  (https://goo.gl/7gqYAN) গবেষণায় আরো জানা গেছে, মোবাইল ফোন থেকে সৃষ্ট তেজস্ক্রিয়তা মানুষের হার্টের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত করে। এর ফলে রক্তের লোহিত রক্তকণিকায় থাকা হিমোগ্লোবিন আলাদা হয়ে যেতে থাকে। মোবাইলের কারণে পরিবেশেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়। পরিবেশবাদীরা এটি বলে আসছেন। (https://goo.gl/WPDTpK)

মোবাইল ফোন পরিবারঘাতক!

বর্তমানে মোবাইল ফোন পারিবারিক মূল্যবোধ বিনষ্ট করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। ‘আল হাওয়াতিফুজ জাকিয়্যা তুসাব্বিবু মাশাকিলা উসরিয়্যা’ শিরোনামে আলজাজিরা ডটনেট একটি প্রতিবেদন ছেপেছে। সেখানে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের বাদশাহ সৌদ ইউনিভার্সিটি থেকে প্রকাশিত এক পিএইচডি থিসিস মতে, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ৪৪ শতাংশ সৌদি নাগরিকের পারিবারিক জীবন হুমকির মুখে! (https://goo.gl/qJBzZi)

সৌদি আরব ছাড়াও বিভিন্ন দেশে মোবাইল ফোনের সহজলভ্যতার সুযোগে পরকীয়া, নিষিদ্ধ প্রেম ও প্রণয় বেড়ে চলছে। ভাঙছে সংসার, বাড়ছে সংঘাত। বেড়ে চলছে অনৈতিক অপরাধ। বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় যে পচন ধরেছে, তার জন্য মোবাইল ফোন অপব্যবহারের বিশেষ ভূমিকা আছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। এ বিষয়ে ২২ নভেম্বর ২০১৬ দৈনিক নয়া দিগন্ত  একটি বিশেষ প্রতিবেদন ছেপেছে। প্রতিবেদনটির শিরোনাম হলো, ‘অভিভাবকের দুশ্চিন্তা মোবাইল নিয়ে।’

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top