Thursday , 9 May 2024
সংবাদ শিরোনাম

বাসের নিচে লুকিয়ে দুই শিশুর ৮০ কিলোমিটার পাড়ি!

চীনে বাসের নিচে দুই শিশুর লুকিয়ে ৮০ কিলোমিটার (৫০ মাইল) ভ্রমণ করার একটি ছবি দেশটিতে ‘পরিবার-বিচ্ছিন্ন’ শিশুদের অবস্থা ও তাদের কল্যাণের বিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোড়ন তৈরি করেছে। দেশটির সংবাদমাধ্যমে ছেলে দুটির নাম উল্লেখ করা হয়নি, তবে তারা দক্ষিণাঞ্চলীয় গুয়াংশি প্রদেশের দরিদ্র একটি গ্রামের ছেলে।

তাদের বাবা-মা কাজ করেন প্রতিবেশী গুয়াংডং প্রদেশে। বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে ওই দুই শিশু এভাবে লুকিয়ে ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তাদের স্কুলশিক্ষক ২৩ নভেম্বর তারা নিখোঁজ বলে খবর দেন। ওই একই দিনে একটি বাসস্টেশনে বাসের নিচে তাদের খুঁজে পাওয়া যায়। ছবিতে দেখা যায় দুটি ছেলেরই সারা শরীর কাদা মাখা এবং তারা বাসের তলায় কিছু একটা ধরে ঝুলছে।

সার্দান মর্নিং পোস্ট পত্রিকার খবর অনুযায়ী ছেলে দুটির বয়স আট বা ৯। পথে বাসটি একটি স্টেশনে থামলে নিরাপত্তাকর্মীরা তাদের খুঁজে পায়। যাত্রাপথের পাঁচ কিলোমিটার পথ বাসটিকে খাড়া চড়াই বেয়ে উঠতে হয়েছিল। কর্মীরা অবাক হয়ে গেছেন কীভাবে অক্ষত অবস্থায় ছেলে দুটি ওই পথটা পার হয়েছে।

শিশু দুটি খুবই রোগা, কাজেই বাসের নিচটা তাদের লুকিয়ে থাকার জন্য খুবই উপযুক্ত জায়গা ছিল, ওই পত্রিকাকে বলেন বাস কম্পানির একজন কর্মচারী।

স্টাফরা জানায় ছেলে দুটি তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে চায়নি। তবে সার্দান মর্নিং পোস্টকে একজন কর্মচারী বলেন: আমরা জানতে পেরেছি এই ছেলে দুটির তাদের বাবা-মার জন্য খুব মন খারাপ করছিল। তারা বাবা-মাকে খোঁজার বৃথা চেষ্টায় বাসের নিচে লুকিয়ে ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। খবরে বলা হচ্ছে তাদের আত্মীয়স্বজনদের খবর দেয়া হয়েছে এবং ওই দিনই সন্ধ্যাবেলা আত্মীয়রা তাদের নিয়ে গেছে।চীনের অনলাইন ব্যবহারকারীরা এই ঘটনায় স্তম্ভিত। জনপ্রিয় সিনা ওয়েবো সাইটে বিষয়টি নিয়ে কয়েক হাজার মানুষ আলোচনা করেছে। ছবিটি ব্যাপক শেয়ার হয়েছে এবং বহু মানুষ এই ঘটনাকে ‘হৃদয়বিদারক’ বলে মন্তব্য করেছে। একজন বলেছে চীনে এখন বহু শিশু অল্প বয়স থেকেই তাদের বাবা-মায়েদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন জীবন কাটায়। তাদের দেখাশোনা করে কারা, তাদের সমস্যার সমাধান করে কারা? আরেকজন মন্তব্য করেছে এটা সমাজের একটা মর্মান্তিক দিক, আর তৃতীয় আরেকজন পরিত্যক্ত শিশুদের আরও দেখাশোনার” আহ্বান জানিয়েছে। গ্রাম এলাকায় এ রকম অনেক শিশু রয়েছে যাদের বাবামা কাজের খোঁজে চলে গেছে বড় শহরগুলোতে। চীনে এ রকম বাবা-মায়ের সংখ্যা কয়েক লাখ। এদের অনেকেই থাকে দাদি-নানি বা দাদুর জিম্মায়। অনেকে একাই। এই দুটি ছেলে থাকত স্কুলের বোর্ডিংয়ে।এই ঘটনার পর অনেকেই চীনা স্বপ্ন-এর ধ্যানধারণা নিয়ে ব্যঙ্গবিদ্রূপ শুরু করেছে। ২০১৩ সালে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ব্যক্তিগত ও জাতীয় আদর্শের যে ধ্যানধারণা তুলে ধরেছিলেন কম্যুনিস্ট তাকে জনপ্রিয় স্লোগানে পরিণত করেছে। তার পরিকল্পনার মধ্যে একটি হলো ২০২০ সালের মধ্যে দারিদ্র্য দূরীকরণ। অনলাইনে একজন মন্তব্য করেছে : চীনের উত্থানের পেছনে রয়েছে অভিবাসী শ্রমিকদের শোষণ, এই মন্তব্য ২০০টি লাইক পেয়েছে। আরেকজন লিখেছেন এই দুই শিশুর জন্য চীনের স্বপ্ন তিক্ততায় ভরা। চীনের স্বপ্ন কি এই শিশুদের স্বার্থের কথা ভাবে না? প্রশ্ন তুলেছেন তারা।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top