Friday , 26 April 2024
সংবাদ শিরোনাম

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মুসলিম দেশগুলোকে শেখ হাসিনার ৬ দফা

রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে মুসলিম দেশগুলোকে ৬ দফা প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দফতরে ওআইসি কন্ট্রাক্ট গ্রুপের বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের বাঙালি হিসেবে চিহ্নিত করার যে রাষ্ট্রীয় প্রোপাগান্ডা মিয়ানমার চালাচ্ছে তা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।

শেখ হাসিনার ছয় দফা প্রস্তাব-

১. রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর সব ধরনের নিপীড়ন এই মুহূর্তে বন্ধ করতে হবে।

২. নিরপরাধ বেসামরিক জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য মিয়ানমারের ভেতরে নিরাপদ এলাকা (সেইফ জোন) তৈরি করা যেতে পারে, যেখানে তাদের সুরক্ষা দেওয়া হবে।

৩. বলপ্রয়োগের ফলে বাস্তুচ্যুত সব রোহিঙ্গা যেন নিরাপদে এবং মর্যাদার সঙ্গে মিয়ানমারে তাদের বাড়িতে ফিরতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

৪. রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে কফি আনান কমিশনের পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

৫. রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ হিসেবে চিহ্নিত করার যে রাষ্ট্রীয় প্রোপাগান্ডা মিয়ানমার চালাচ্ছে, তা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।

৬. রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে না ফেরা পর্যন্ত তাদের জরুরি মানবিক সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে হবে ভ্রাতৃপ্রতিম মুসলিম দেশগুলোকে।

বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গত ২৪ অগাস্ট রাতে আড়াই ডজন পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ক্যাম্পে হামলার পর দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা মুসলমানদের গ্রামে গ্রামে নতুন করে দমন অভিযানে নামে।

এ ঘটনায় এবার সবচেয়ে বেশি রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়ে দেশান্তরী হতে বাধ্য হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, গত ২৫ অগাস্ট থেকে চার লাখের বেশি মানুষ মিয়ানমার থেকে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। এই শরণার্থীদের ৬০ শতাংশই শিশু।

‘এটা এক অবর্ণনীয় মানবিক বিপর্যয়। আমি নিজে তাদের কাছে গেছি, তাদের মুখ থেকে , বিশেষ করে নারী ও শিশুদের ভয়াবহ দুর্ভোগের বিবরণ শুনেছি। আমি বলব, আপনারা সবাই আসুন, এই শরণার্থীদের মুখ থেকে শুনে যান, মিয়ানমারে কীরকম নির্মমতা চলছে।’

এর আগে, জাতিসংঘে পরিবেশ বিষয়ক এক সম্মেলনে যোগ দেন শেখ হাসিনা।এসময় তিনি বলেন জলবায়ুর ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর পাশে দাঁড়াতে হবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭২ তম অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরের তৃতীয় দিনে স্থানীয় সময় বিকেলে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন আয়োজিত পরিবেশ বিষয়ক এক উচ্চ পর্যায়ের সভায় অংশ নেন শেখ হাসিনা।

বিশ্ব নেতাদের সামনে ঐ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় ৪ দফা সুপারিশ তুলে ধরে বলেন- অবশ্যই ধনী রাষ্ট্রগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর পাশে দাঁড়াতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতি বছর বাংলাদেশ জিডিপির এক শতাংশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ব্যয় করছে। আমরা জাতীয় জলবায়ু পরিবর্তন স্ট্রাটেজি এবং কর্মপরিকল্পনা নিয়েছি।’

এর আগে, জাতিসংঘ সদর দপ্তরেই টেকসই উন্নয়নে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকেও অংশ নেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ সব ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়নে এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বিশ্ব মঞ্চে বলেন- ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মোট কর্মসংস্থানের ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।

এরপর, নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে তিনটায় রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন ওআইসির নেতাদের সাথেও বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। সেখানে, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মুসলিম দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top