Wednesday , 15 May 2024
সংবাদ শিরোনাম

মহিলাদের আমলের উত্তম জায়গা হলো স্বীয় ঘর

মহিলাদের আমলের উত্তম জায়গা হলো স্বীয় ঘর  : মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক-জাহেলি যুগের মতো সৌন্দর্য প্রদর্শন কোরো না। আর তোমরা সালাত কায়েম করো, জাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করো।

হে নবী পরিবার, আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূরীভূত করতে এবং তোমাদের সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে। আর তোমাদের ঘরে আল্লাহর যে আয়াতগুলো ও হিকমত পঠিত হয়, তা তোমরা স্মরণ রেখো। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক অবহিত। ’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৩৩-৩৪)একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘নিঃসন্দেহে তখনই সে আল্লাহর নিকটবর্তী থাকে, যখন স্বীয় বাড়ির সবচেয়ে গোপন স্থানে অবস্থান করে। ’ (ইবনে খুযাইমা, হা. ১৬৮৬)ঘরে নিজের কাজ নিজে করা এবং ঘরবাসীদের কাজে সহযোগিতা করা : হজরত কাসেম (রহ.) বলেন, আমি একদা হজরত আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসুল (সা.) ঘরের মধ্যে কী কাজ করতেন? উত্তরে তিনি বললেন, ‘তিনি অন্যান্য মানুষের মতোই একজন ছিলেন, নিজের কাপড়ের উকুন পরিষ্কার করতেন, বকরির দুধ দোহন করতেন এবং নিজের কাজ নিজেই করতেন। ’ (মুসনাদে আহমদ : ২৬১৯৪)অন্য বর্ণনায় আছে, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) নিজের কাপড় নিজেই সেলাই করতেন, নিজের জুতা নিজেই মেরামত করতেন এবং সাধারণ মানুষের মতোই ঘরের কাজকর্ম করতেন। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৪৯০৩)আসওয়াদ (রহ.) বলেন, আমি আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘরে কী কাজ করতেন? তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকতেন—অর্থাৎ গৃহস্থালির কাজে পরিবার-পরিজনের সহযোগিতায় থাকতেন। যখন নামাজের সময় হতো নামাজে চলে যেতেন। (বুখারি, হাদিস : ৬৭৬)সেবকদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা : হজরত ইবনে ওমর (রা.) বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি আমার সেবককে কতবার ক্ষমা করব?’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘দৈনিক ৭০ বার। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৪৯) অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) অধীনস্থ গোলামদের ব্যাপারে বলেন, ‘তারা তোমাদের ভাই, আল্লাহ তাআলা তাদের তোমার অধীন করেছেন। অতএব তোমরা নিজে যা খাও তা তাদের খাওয়াও, নিজে যা পরিধান করো তা তাদের পরাও, তাদের সাধ্যাতীত কাজ চাপিয়ে দিয়ো না, যদি কোনো সাধ্যাতীত কাজ দাও তাহলে নিজেও তাকে সাহায্য করো। ’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৫১৫৮)মেহমানদের সম্মান করা : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ও পরকালের ওপর বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহমানের সম্মান করে। (বুখারি, হাদিস : ৬০১৮)আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা : আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর আত্মীয়স্বজনরা একে অপরের তুলনায় অগ্রগণ্য, আল্লাহর বিধান অনুসারে। নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রতিটি বিষয়ে মহাজ্ঞানী। ’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ৭৫)রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি তার রিজিকের প্রশস্ততা ও হায়াত বৃদ্ধি চায়, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে। (বুখারি, হাদিস : ২০৬৭)প্রতিবেশীর হক আদায় করা এবং তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা :রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ও পরকালের ওপর বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। (বুখারি, হাদিস : ৬০১৮)হজরত আবু যর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে আবু যর! যখন তুমি ঝোল তরকারি পাকাবে, তখন তাতে ঝোল বাড়িয়ে দিয়ো, তাতে তোমার প্রতিবেশীকেও স্মরণে রেখো। ’ (মুসলিম, হাদিস : ২৬২৫)বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করা : প্রিয় নবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব কষ্টগুলো থেকে কোনো কষ্ট দূর করবে, কিয়ামতের কষ্টগুলো থেকে আল্লাহ তার একটি কষ্ট দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোনো অভাবীকে দুনিয়াতে ছাড় দেবে, আল্লাহ তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে ছাড় দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের দোষ গোপন রাখবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন। আর আল্লাহ বান্দার সাহায্যে থাকেন, যতক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্য করে যায়। ’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫৮০)হালাল খাবার খাওয়া এবং হারাম থেকে বেঁচে থাকামহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ, আহার করো আমি তোমাদের যে হালাল রিজিক দিয়েছি তা থেকে এবং আল্লাহর শোকর করো, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদত করো। নিশ্চয়ই তিনি তোমাদের ওপর হারাম করেছেন মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের গোশত এবং যা গায়রুল্লাহর নামে জবাই করা হয়েছে। সুতরাং যে বাধ্য হবে, অবাধ্য বা সীমালঙ্ঘনকারী না হয়ে, তাহলে তার কোনো পাপ নেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৭২-১৭৩)গায়রে মাহরাম পুরুষ-মহিলাদের মেলামেশা না হওয়া মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর যখন নবীপত্নীদের কাছে তোমরা কোনো সামগ্রী চাইবে, তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে; এটি তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র। ’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৫৩)অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদের, কন্যাদের ও মুমিনদের নারীদের বলো, তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের ওপর ঝুলিয়ে দেয়, তাদের চেনার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে। ফলে তাদের কষ্ট দেওয়া হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৫৯)পরিবারের খরচে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা :আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই তোমার রব যাকে ইচ্ছা তার জন্য রিজিক প্রশস্ত করে দেন এবং সীমিত করে দেন। তিনি অবশ্যই তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে পূর্ণজ্ঞাত, পূর্ণদ্রষ্টা। ’ (সুরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৯)আল্লাহ আরো বলেন, ‘তোমরা আহার করো ও পান করো, কিন্তু অপব্যয় করবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না। ’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩১)অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমাদের অর্থসম্পদ অপ্রয়োজনীয় কাজে খরচ করবে না। জেনে রেখো, যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই, আর শয়তান নিজ প্রতিপালকের ঘোর অকৃতজ্ঞ। ’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ২৬-২৭)ঘর থেকে বের হওয়ার দোয়া : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “যখন কোনো ব্যক্তি ঘর থেকে বের হওয়ার সময় ‘বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহি লা-হাওলা ওয়া কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ পড়বে, তার ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষিত হবে, তুমি সঠিক পথপ্রদর্শিত হয়েছ। তোমার জন্য যথেষ্ট হয়েছে এবং তুমি রক্ষিত হয়েছ। তখন শয়তান সরে যায় এবং অন্য শয়তান বলে, তুমি কিভাবে তার সঙ্গে পারবে? সে তো পথপ্রদর্শিত হয়েছে, তার জন্য যথেষ্ট হয়েছে এবং সে রক্ষিত হয়েছে। ’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৫০৯৫)

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top