Wednesday , 15 May 2024
সংবাদ শিরোনাম

শরণার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বিক্ষোভে উত্তাল

সাতটি মুসলিমপ্রধান দেশের অভিবাসী ও শরণার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের পর ফের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশটির বিভিন্ন শহর। নিউইয়র্ক, নিউ জার্সিসহ দেশটির এক ডজনেরও বেশি শহরে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছেন।
গত বছরের নভেম্বরে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের পর দফায় দফায় বিক্ষোভে নামে দেশটির লাখ লাখ মানুষ। নির্বাচনের আগে দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে গিয়ে আবারো বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।এর আগে শুক্রবার নির্বাহী আদেশে যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী গ্রহণ কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। ইরান, ইরাক, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেনের শরণার্থী ও অভিবাসীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা ৯০ দিন বন্ধ রাখার আদেশ দেয়া হলেও সিরীয়দের ক্ষেত্রে তা অনির্দিষ্টকাল বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়।ট্রাম্পের এই নির্বাহী আদেশের পর দেশের বাইরে থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরছে বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা। কিন্তু আদেশের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ফেরত প্রায় দুইশ জনকে আটক করা হয় জনএফ কেনেডি বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন বিমানবন্দর থেকে।অভিবাসীদের ঠেকাতে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে দেশটির আদালত। আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ)-এর একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে রোববার যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ সাময়িক স্থগিত করেছেন।
অভিবাসন বন্ধে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিমানবন্দর ও প্রধান প্রধান শহরে বিক্ষোভে নেমেছেন হাজার হাজার মানুষ। জনএফ কেনেডি বিমানবন্দরে দুই হাজারেরও বেশি মানুষ বিক্ষোভ করেছেন বলে বার্তাসংস্থা এপি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।এই বিমানবন্দর থেকে শনিবার অন্তত ১২ শরণার্থীকে আটক করে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পামেলা ফ্রেন্স নামের এক প্রতিবাদকারী বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২৪ ঘণ্টায় যা করেছেন, তা ন্যক্কারজনক, অমর্যাদাপূর্ণ ও অমার্কিনী। আমি এখানে প্রতিবাদ জানাতে এসেছি।’বিক্ষোভের মুখে বিমানবন্দরের টার্মিনালগামী ট্রেন চলাচল বন্ধ করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।নিউ জার্সির নিওয়ার্ক লিবার্টি ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দরে ১২০ জনেরও বেশি মানুষ বিক্ষোভ করেন। তারা অভিবাসন বন্ধে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছেন। এই বিমানবন্দরে শরণার্থী ও অভিবাসীদের বিক্ষোভে সমর্থন জানাতে ও প্রবেশের চেষ্টার সময় বেশ কয়েকজন আইনজীবীকে আটক করা হয়েছে।ওয়াশিংটনের ডালাস ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দরেও বিক্ষোভ করেছে কয়েক ডজন প্রতিবাদকারী। এ সময় তাদেরকে ‘ঘৃণা নয় ভালোবাসা, মুসলিমদেরকে এখানে স্বাগত’সহ বিভিন্ন ধরনের সস্নোগান দিতে দেখা যায়।এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া, ডেনভার, শিকাগো, ডালাস, সিয়াটল, অরিগনের পোর্টল্যান্ড, লস অ্যাঞ্জেলস, সান ফ্রান্সিসকো ও স্যান ডিয়াগোতে হাজার মানুষ শরণার্থী ও অভিবাসনবিরোধী ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে। ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ স্থগিত
এদিকে বৈধ ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পেঁৗছানোর পরও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার আওতায় কয়েকটি দেশের নাগরিকদের বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানোর যে প্রক্রিয়া যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ শুরু করেছে, আদালতের আদেশে তা আটকে গেছে।আমেরিকান সিভিল লিবার্টিস ইউনিয়নের (এসিএলইউ) করা এক আবেদনে নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিন ফেডারেল আদালত শনিবার এই স্থগিতাদেশ দেয়।বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী মর্যাদা পাওয়া ব্যক্তি, বৈধ ভিসাধারী এবং যাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি আছে- তাদের আটক করে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত করেন বিচারক অ্যান ডোনেলি। স্থগিতাদেশের পর বাদীপক্ষের আইনজীবী ইমিগ্রেন্টস রাইটস প্রোজেক্টের ডেপুটি লিগ্যাল ডাইরেক্টর লি গেলান্র্ট বলেন, ট্রাম্পের আদেশের পর যাদের বিভিন্ন বিমানবন্দরে আটক করা হয়েছে তাদের নামের তালিকা বিচারক সরকারের কাছে দেখতে চেয়েছেন। তারা প্রত্যেকের সঙ্গে দেখা করবেন, কথা বলবেন; চেষ্টা করবেন দ্রুত তাদের আটকাদেশ থেকে মুক্ত করতে, অন্তত তাদের যেন মৃত্যুর মুখে ফেরত পাঠানো না হয়, সে চেষ্টা করবেন।বিবিসি জানিয়েছে, এই স্থগিতাদেশ বিষয়ে ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে পরবর্তী শুনানির দিন রেখেছে আদালত।
আগামী চার মাস যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে শুক্রবার একটি নির্বাহী আদেশে সই করেন ট্রাম্প। সিরিয়ার শরণার্থীদের জন?্য অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পাশাপাশি মুসলিমপ্রধান ছয়টি দেশের নাগরিকদের জন?্য তিন মাসের কড়াকড়ি আরোপ করা হয় ওই আদেশে।
সেখানে বলা হয়, সিরিয়া ছাড়াও ইরাক, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেন থেকে আগামী ৯০ দিন কেউ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি পাবে না। ‘গ্রিন কার্ড’ধারীরাও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকবেন বলে হোমল?্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়।পেন্টাগনে বসে ওই আদেশে সই করে ট্রাম্প বলেন, উগ্র ইসলামী সন্ত্রাসীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে দূরে রাখতেই তার এই ব?্যবস্থা।
বিশ্বজুড়ে ট্রাম্পের ওই আদেশের প্রভাব পড়তে শুরু করে শনিবার থেকেই। বৈধ ভিসা থাকার পরও মিশরের কায়রো বিমানবন্দরে পাঁচ ইরাকি ও এক ইয়েমেনি নাগরিককে আটকে দেয়া হয়, যাদের নিউ ইয়র্কের ফ্লাইট ধরার কথা ছিল।প্রয়োজনীয় ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট থাকার পরও নিউ ইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দরে অবতরণের পর দুই ইরাকিকে আটক করা হলে আদালতে যায় আমেরিকান সিভিল লিবার্টিস ইউনিয়ন (এসিএলইউ)।
এসিএলইউ সদস্য জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি ল সেন্টারের আইন বিভাগের অধ্যাপক ডেভিড কোল এক টুইটে বলেন, ‘জনাব ট্রাম্প, আমরা আপনাকে আদালতে দেখে নেব।’ মামলার হুমকি দেয়া হয় কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশন (সিএআইআর)-এর পক্ষ থেকেও।
ট্রাম্পকে ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে শরণার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসনের সুযোগ অব্যাহত রাখার আহবান জানানো হয় জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) এক যুক্ত বিবৃতিতে।আদালতের স্থগিতাদেশ পাওয়ার পর আমেরিকান সিভিল লিবার্টিস ইউনিয়নের এক টুইটে বলা হয়, এক সপ্তাহের মধ্যে ট্রাম্পের প্রথম হার হলো আদালতে। গত ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার পর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী একের পর এক নির্বাহী আদেশ জারি করে রীতিমতো শোরগোল বাধিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। এই এক সপ্তাহে তিনি বহু আলোচিত ওবামাকেয়ার বাতিল করেছেন, ট্রান্স প?্যাসিফিক পার্টনারশিপ চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়েছেন; মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন এবং শরণার্থীদের আটকাতে জারি করেছেন কড়াকড়ি।শনিবার সকালে ওভাল অফিসে বসে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছিলেন, যেসব পদক্ষেপ তিনি নিয়েছেন, তা অনেকদিন ধরেই বকেয়া ছিল। আর অভিবাসন নিয়ে তার আদেশ ‘চমৎকারভাবে’ কাজ করছে। বিমানবন্দরসহ সবখানেই তা কার্যকর হচ্ছে।আদালতের স্থগিতাদেশ আসার পর হোয়াইট হাউসের আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, তারা এখনো আদালতের আদেশ হাতে পাননি। তবে যে কোনো আদেশ সরকার তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়ন করবে

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top