Tuesday , 14 May 2024
সংবাদ শিরোনাম

উপকূলীয় এলাকায় সবুজ বেষ্টনিকে দীর্ঘমেয়াদী করতে ম্যানগ্রোভ বন তৈরি

উপকূলীয় এলাকায় সবুজ বেষ্টনিকে দীর্ঘমেয়াদী করতে ম্যানগ্রোভ বন তৈরি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট দেশের উপকূলীয় এলাকায় কেওড়া বনের মধ্যে ম্যানগ্রোভ জাতীয় গাছ সৃজন করে সাফল্য পেয়েছে।ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা জানান, উপকূলীয় এলাকায় নতুন জেগে ওঠা চরগুলোতে যে কেওড়া বাগান করা হয়েছে, তাতে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেওয়ায় বংশবৃদ্ধি হচ্ছে না। তাই এর ধারাবাহিক ভবিষ্যত্ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ কারণে ম্যানগ্রোভ বনায়নের পরিকল্পনা করা হয়। কয়েক বছর গবেষণার পর পরীক্ষামূলক ম্যানগ্রোভ সাফল্যের মুখ দেখায় বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত হয়েছেন। তারা মনে করেন উপকূলীয় এলাকায় মানুষের তৈরি এসব বন প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের মতই বছরের পর বছর বেঁচে থাকবে।বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, উপকূলীয় এলাকায় তৈরি করা কেওড়া বনের অভ্যন্তরে সুন্দরী, গেওয়া, পশুর, ধুন্দুল, কাঁকড়া, খলসী, সিংড়া, গরান, কিরপা, হেঁতাল এবং গোলপাতার বাগান তৈরির পদ্ধতি নিয়ে ১৯৯০ সাল থেকে গবেষণা পরিচালনা করা হয়।উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালী, ভোলা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় জোয়ারের পানিতে কেওড়া বন প্লাবিত হওয়ার কারণে কোনো প্রজাতির গাছ রোপণ করা হলে তা বাঁচিয়ে রাখা যাবে এবং কেওড়া গাছগুলো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়ে বংশবিস্তার করতে সক্ষম হবে তা নিয়ে গবেষণা করা হয়। পর্যায়ক্রমে ২৫ হেক্টর জমিতে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছ লাগানো হয়। এর মধ্যে ৭টি বৃক্ষ সুন্দরী, গেওয়া, পশুর, খলসী, সিংড়া, হেঁতাল এবং গোলপাতা উপযুক্ত হিসেবে পাওয়া গেছে। বেশিরভাগ ইতিমধ্যে বৃক্ষের পূর্ণতা পাওয়ায় রিজেনারেশন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রাকৃতিকভাবেই এসব গাছ থেকে নতুন নতুন গাছের জন্ম হতে শুরু করে বনের ধারা অব্যাহত রাখছে।ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা জানান, যেসব চর উঁচু হয়ে গেছে, এখন আর জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে না, সেসব বনে মূল ভূমির বৃক্ষরোপণের ওপর গবেষণা চালানো হয়। এ গবেষণায় ১৩ প্রজাতির মধ্যে রেইন ট্রি, ঝাউ, সাদা কড়ই, কালো কড়ই, খইয়া বাবলা এবং বাবলা জাতের ৬টি বৃক্ষকে উপযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বন গবেষক মো. আব্দুল কুদ্দুস মিয়া জানান, ১৯৬৬ সাল থেকে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের বিশাল ভূখন্ড জুড়ে (১ লাখ ৯০ হাজার হেক্টর) বন তৈরি করা হয়। এসব বনের ৯৪ শতাংশই কেওড়া প্রজাতির একক বন। কয়েক বছর পর দেখা যায়, এসব বন নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এর মধ্যে কেওড়ার কান্ড ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণে গাছ মরে যাওয়া, বনভূমির উচ্চতা বৃদ্ধি, মাটি শক্ত হওয়ার কারণে এরা দুর্বল হয়ে পড়ছে। নিজেরা সতেজ থাকছে না আর বংশবিস্তার করার সক্ষমতাও হারিয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, কেওড়া একাকী থাকার কারণে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে বাঁচতে হিমশিম খাচ্ছে। এর অন্যতম কারণ নির্ণয় করা হয়েছে, কেওড়া গাছের পাশাপাশি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ গাছের অনুপস্থিতি। এ কারণে কেওড়ার রিজেনারেশন হচ্ছে না। ফলে বনের ভবিষ্যত্ নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়।কেওড়া বন ২৫ বছর পরে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় টেকসই বন সৃজনের লক্ষ্যে প্লান্টেশন ট্রায়াল ইউনিট-এর মাধ্যমে কেওড়া বাগানের ভিতরে অন্য প্রজাতির বাগান তৈরির পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।যেসব বনভূমিতে জোয়ারের পানি ঢুকছে সে সব বাগানের পাশাপাশি উঁচু বাগানগুলোতে পৃথক ‘প্লান্টেশন ট্রায়াল’ দেওয়ার ক্ষেত্রে আলাদা প্রজাতির বৃক্ষকে বেছে নেওয়া হয়। উভয় ক্ষেত্রেই লবণাক্ততা সহিষ্ণু উদ্ভিদকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ গবেষণার পর দু’টোতেই সফলতা পাওয়া যায়। এর মধ্যে কেওড়া বনের মাঝে ৭টি আর উঁচু ভূমিতে ৬টি বৃক্ষরোপণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বনবিভাগকে। তিনি বলেন, এর ফলে এসব বন সুন্দরবনের মতো টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার পাশাপাশি প্রাকৃতিক বিরূপ প্রভাবের হাত থেকে উপকূলীয় জনগোষ্ঠী এবং জীববৈচিত্র্যকে রক্ষায় ভূমিকা রাখবে। উপকূলে তৈরি হবে দীর্ঘমেয়াদী টেকসই সবুজের বেষ্টনি।বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের বরিশাল বিভাগীয় কর্মকর্তা শেখ এহিউল ইসলাম বলেন, রিজেনারেশনের মাধ্যমে এসব বন হাজার বছর বেঁচে থাকবে। তিনি বলেন, নতুন একটি সার্ভেতে দেখা গেছে, রিজেনারেশনের কারণে প্রাকৃতিকভাবে সবচেয়ে বেশি বংশবিস্তার করছে গেওয়ার চারা গাছ।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top