Sunday , 19 May 2024
সংবাদ শিরোনাম

রোজা ভঙ্গ করার ‘পাপ ও ক্ষতি’

রহমত ও নাজাতের মাস এই মাহে রমজান। রমজান মাসের রোজা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য ‘ফরজ’ করা হয়েছে।দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যেমন ফরজ, তেমনি সিয়াম সাধনার মাধ্যমে নির্ধারিত রোজা রাখাও ফরজ। ইচ্ছা করে ফরজ আদায় না করা কবিরা গুনাহ (মহাপাপ)। ইসলামী শরিয়ত মতে ‘তওবা’ ছাড়া আল্লাহ পাকের দরবারে এই পাপের কোনো ক্ষমা নেই। অনেকেই ইচ্ছা করে রোজা রাখেন না। আবার কেউ কেউ ইফতারের আগেই ভেঙ্গে ফেলেন। যারা মাহে রমজান পাওয়ার পরও রোজা রাখেন না এবং এই মাসকে সন্মানিত করেন না, তাদের জন্য দূর্ভাগ্যের আর কিছু নাই। এমন লোক কতবড় ক্ষতির মধ্যে রয়েছেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধু তাই নয়, শরিয়তের অনুমতি ছাড়া বিনা কারণে একটি রোজা ভঙ্গ করার সুযোগ নেই।
সাহাবি সৈয়্যদুনা হযরত জাবির (রাদি.) ইবনে আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়েছে আর সেটার রোজা রাখেনি, সেই ব্যক্তি হতভাগা। যে ব্যক্তি আপন পিতামাতাকে কিংবা উভয়ের যে কোনো একজনকে পেয়েছে কিন্তু তার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করেনি, আর যার নিকট আমার নাম উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু সে আমার উপর দরুদ শরীফ পাঠ করেনি, সেও হতভাগা। (মাজমাউয যাওয়ায়িদ, ৩য় খণ্ড, ৩৪০ পৃষ্ঠা) এই হাদিসে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, যে রমজান মাস পেয়েও রোজা রাখল না, তার মত দূর্ভাগা আর কেউ নেই।
রমজান মাসে রোজা না রাখা তথা ইফতারের আগে রোজা ভাঙ্গার পরিণতি কী হতে পারে তা নিচের হাদিস পড়লে সহজে অনুমেয়। সাহাবি সৈয়্যদুনা হযরত আবু উমামা বাহেলী (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি। তিনি (প্রিয়নবী) বলেন, ‘আমি ঘুমিয়ে ছিলাম, তখন স্বপ্নে দুজন লোক আমার নিকট আসলো। আর আমাকে এক দূর্গম পাহাড়ের উপর নিয়ে গেলো। আমি যখন পাহাড়ের মাঝখানে পৌঁছলাম, তখন ভয়ঙ্কর আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমি (রাসুল সা.) বললাম – এসব কিসের আওয়াজ? তখন আমাকে বলা হলো- ‘এটা জাহান্নামীদের আওয়াজ। তারপর আমাকে আরো সামনে নিয়ে যাওয়া হলো, তখন আমি এমন কিছু লোকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম, যাদেরকে তাদের পায়ের রগ দ্বারা গোড়ালীতে বেঁধে উপুড় করে লটকানো হয়েছে। আর তাদের চিবুকগুলো চিরে ফেলা হয়েছে। ফলে সেগুলো থেকে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছিল। তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম এরা কারা? উত্তর আসলো– এসব লোক রোজা ভঙ্গ করতো এরই পূর্বে যখন রোজার ইফতার করা হালাল। (অর্থ্যাৎ- ইফতারের পূর্বে রোজা ভঙ্গ করে ফেললে)
(সহিহ ইবনে হাব্বান, ৯ম খণ্ড) শুধু তাই নয়, রমজানের প্রত্যেকটি রোজাকে সমান গুরুত্ব দিতে হবে। হাল্কা করে নেওয়ার সুযোগ নেই। সাহাবি সৈয়্যদুনা হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন – রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি রমজানের একদিনের রোজা শরিয়তের অনুমতি ও রোগাক্রান্ত হওয়া ছাড়া ভেঙ্গেছে (রাখেনি) তাহলে সমগ্র মহাকাল যাবত রোজা রাখলেও সেটার কাযা আদায় হবে না। (সহিহ বুখারী, ১ম খণ্ড, হাদীস-১৯৩৪) তাই কোনভাবেই গাফলতি করে রোজা থেকে বিরত থাকা উচিত নয় বরং সঠিকভাবে সিয়াম সাধণার মাধ্যমে প্রত্যেকটি রোজা পালন করা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের উপর ফরজ। তাই আসুন! অবহেলায় একটি রোজাও যেন বিনা কারণে আমাদের কাছ থেকে ছুটে না যায়। শরিয়ত সম্মতভাবেই আমরা রোজা পালন করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তওফিক দিন … আমীন।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top