অগ্নিকাণ্ড ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীদের বিপন্ন মানুষের পাশে বিশ্বস্ত বন্ধুর মতো দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে নির্বাচনের সময় বিএনপি-জামায়াতের দেশজুড়ে জ্বালাও-পোড়াও ও নাশকতায় ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা জনগণের পাশে ছিলেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।বুধবার সকালে রাজধানীর মিরপুরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ-২০১৫ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ২০১৬ সালে দেশে মোট ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা হবে ৫৪৯টি আর বর্তমানের আট হাজার ৩৫৪ জন জনবল বেড়ে প্রায় ১৫ হাজারে উন্নীত হবে। দেশের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স খাতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে বলেও জানান তিনি।রানা প্লাজা ভবন ধস, নিমতলী, তাজরীন ফ্যাশনসহ বসুন্ধরা শপিং মলের অগ্নিকাণ্ডের উদাহরণ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দেশে অনেক বড় বড় অগ্নি, নৌ ও সড়ক দুর্ঘটনা, ভূমিধস এবং ভবনধসে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা দক্ষতা ও সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। তবে পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও দুর্যোগকালীন ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।তিনি আরও বলেন, গার্মেন্টস সেক্টরসহ শিল্পখাতে অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিত ও জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন শিল্প-কারখানার প্রায় দুই লাখ ১০ হাজার কর্মীকে অগ্নি নির্বাপণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পরিদর্শন বাড়াতে ২১৮টি ইন্সপেক্টর পদও সৃষ্টি করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।২০০৯ সালে সরকার গঠন করার প্রতিটি উপজেলায় ন্যূনতম একটি করে ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করার সিদ্ধান্তের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারই অংশ হিসেবে এ পর্যন্ত দেশে ১০০টি নতুন ফায়ার স্টেশন নির্মাণ ও চালু করা সম্ভব হয়েছে।তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসকর্মীদের দেশে ও বিদেশে উচ্চতর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সহায়ক শক্তি হিসেবে সারাদেশে ৬২ হাজার কমিউনিটি ভলান্টিয়ার তৈরি করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার ভলান্টিয়ারের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। যারা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে।
ফায়ার সার্ভিস দুর্ঘটনায় বিপন্ন মানুষের বিশ্বস্ত বন্ধু
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বহুতল ভবনের অগ্নি নির্বাপণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ কাজের জন্য ইতোমধ্যে ২০০ কোটি টাকার সর্বাধুনিক সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হয়েছে। আরো যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম সংগ্রহের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। ভূমিকম্প দুর্যোগ মোকাবেলায় বিশেষ করে বিধ্বস্ত ভবনে দ্রুত উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পাঁচটি আন্তর্জাতিক মানের আরবান সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ টিম গড়ে তোলা হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।সারা দেশের হাইওয়েতে ৭৯টি দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থানে ভ্রাম্যমাণ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স র্যাপিড রেসকিউ স্কোয়াড দায়িত্ব পালন করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌ-দুর্ঘটনার জন্য আধুনিক উদ্ধারকারী রেসকিউ ফ্লোট, রেসকিউ স্পিড বোট, জেমিনি বোট ইত্যাদি সংগ্রহের মাধ্যমে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স তাদের ওয়াটার রেসকিউ ক্যাপাসিটি বহুলাংশে বাড়িয়েছে।সরকার এ অধিদপ্তরের কর্মীদের পূর্ণাঙ্গ রেশন ও ৩০ শতাংশ ঝুঁকিভাতা চালু করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, কর্মীদের খাকি পোশাক পরিবর্তন করে মর্যাদাপূর্ণ নতুন পোশাক প্রবর্তন করা হয়েছে। সততা, দেশপ্রেম ও সর্বোচ্চ পেশাদারত্ব নিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে যেতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকর্মীদের কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।এর আগে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কুচকাওয়াজ ও বিশেষ মহড়া প্রদর্শন করেন। ‘দুর্যোগ-দুর্ঘটনা ঝুঁকি হ্রাসে প্রয়োজন জনসচেতনতা ও প্রশিক্ষণ’ -এ স্লোগান নিয়ে বুধবার শুরু হয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ-২০১৫।
Share!