Friday , 19 April 2024
সংবাদ শিরোনাম

জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব চায় পরিকল্পনা কমিশন

যশোর, খুলনা ও সাতক্ষীরার তিন দশকের জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দায়িত্ব নিতে চায় পরিকল্পনা কমিশন। জলাবদ্ধতা নিরসনে একটি জাতীয় টাস্কফোর্স গঠন করে সে টাস্কফোর্সের প্রধান হিসেবে পরিকল্পনাসচিবকে রাখার প্রস্তাব করেছে কমিশন। একই সঙ্গে আলাদা একটি তহবিল গঠনের প্রস্তাবও করেছে কমিশন।

পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগ ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) যৌথ গবেষণায় এমন প্রস্তাব করা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলানগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে গবেষণাটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব জিয়াউল ইসলাম, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউএনডিপির পরামর্শক রবিউল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য দেন পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের প্রধান সাঈদুল হক।

সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য শামসুল আলম বলেন, ‘পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্ব হলো দেশের নীতি কৌশল প্রণয়ন করা। দেশের ভবিষ্যৎ কর্মকৌশল ঠিক করা। অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি নির্ণয় করা। একটি অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ পরিকল্পনা কমিশনের নয়। জলাবদ্ধতা নিরসন কারিগরি বিষয়। সে বিষযে বিশেষজ্ঞ আছে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় আছে। তারা জলাবদ্ধতা নিয়ে কাজ করবে—এটাই তাদের দায়িত্ব।’ তিনি আরো বলেন, ‘পরিকল্পনা কমিশন কোনো বাস্তবায়নকারী সংস্থা নয়। আপনি প্রকল্প বাস্তবায়ন করবেন, এটা আপনার দায়িত্বের সঙ্গে যায় না। ম্যান্ডেট দেওয়া হয়নি আপনাকে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য। জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য সমন্বয়ের ওপর জোর দিতে হবে। একই সঙ্গে ড্রেজিং ও উজান থেকে পানিপ্রবাহ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।’

শামসুল আলম বলেন, ‘সরকার ১০০ বছর মেয়াদি একটি ডেল্টা প্ল্যান প্রণয়ন করছে। সেখানে জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে।’

অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ছোটকাল থেকেই যশোরের ভবদহ অঞ্চলের দুঃখের কথা শুনে আসছি। দক্ষিণাঞ্চলে জলাবদ্ধতা বহু বছরের পুরনো। ৩০ বছর আগের। এখনো সমস্যার সমাধান হয়নি। জলাবদ্ধতা নিরসনে কত টাকা লাগতে পারে, সেটি বের করতে বিশেষজ্ঞদের কাছে পরামর্শ চাই। একই সঙ্গে জলাবদ্ধতা নিরসনে সব সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধন জরুরি।’

গতকাল প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত যশোর, খুলনা ও সাতক্ষীরার জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থির মূল্যে পাঁচ হাজার ৬৯৭ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় বিভিন্ন প্রল্পের আওতায় এই টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু প্রকল্পগুলোর মধ্যে সমন্বয় না থাকায় সাধারণ মানুষ সুফল পায়নি।

প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সব সংস্থার সমন্বয়ে ২০১৮ সালের মধ্যে একটি ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করা। এ ছাড়া ২০১৯ সালের মধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসনে একটি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করতে হবে। এই অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়নে ২০২০ থেকে ২০৩০ সাল এই ১০ বছর মেয়াদি আলাদা একটি তহবিল গঠন করতে হবে। এ ছাড়া জাতীয় ও জেলা পর্যাযে দুটি করে মোট চারটি কমিটি গঠন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ২০১২ সালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন করা হয়েছিল। সে আইনে দুটি আলাদা তহবিল গঠনের কথা বলা হয়েছিল। যার মধ্যে একটি হওয়ার কথা ছিল জাতীয় পর্যায়ের। অন্যটি জেলা পর্যায়ের। কিন্তু পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও দুটি তহবিল এখন পর্যন্ত গঠন হয়নি।

গবেষণায় বলা হয়েছে, তিন জেলার বেশির ভাগ এলাকায় বছরের সাত থেকে আট মাস জলাবদ্ধতা লেগে থাকে। এতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, কৃষি ও মত্স্য খাতে ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়ে আসছে। এ থেকে স্থায়ী মুক্তির উপায় খুঁজতে এ যৌথ গবেষণা পরিচালনা করা হয়।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top