একের পর এক বেরিয়ে আসছে দেশে তৈরি পোশাক খাতে এলসি জাতিয়াতির ঘটনা। এতে কোটি কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে ফাঁদে পড়া শিল্প মালিকদের। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রশাসনের অসহযোগিতায় প্রতারক চক্রকে ধরা যাচ্ছেনা। অনেক ক্ষেত্রেই বাধা হয়ে দাঁড়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। রপ্তানি আদেশ নেয়ার ক্ষেত্রে মালিকপক্ষ ও ব্যাংকগুলোকে আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিজিএমইএ।
এখনও রেশ কাটেনি, যুক্তরাজ্য ভিত্তিক পোশাক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ওয়ই অ্যান্ড এক্স হোম লিমিটেডের নামে ৬শ’ কোটি টাকার এলসি জালিয়াতির ঘটনার। যেখানে ভুক্তভোগী দেশের নামকরা ২০টি পোশাক কারখানা।
এরই মধ্যে জানা যায়, একই কৌশলের ফাঁদে পড়েছে ড্রেস আপ লিমিটেড, ফেমাস গার্মেন্টস লিমিটেড, অর্কিড স্টাইলস লিমিটেড, ইয়ারা নিটওয়্যার লিমিটেডসহ পাঁচটি পোশাক কারখানা। এবার টাকার অংক, সবমিলিয়ে ৩০ লাখ ডলার। আর গেল বছরের মাঝামাঝি থেকে একের পর এক এসব জালিয়াতির ঘটনা ঘটিয়েছে আরএইচএস ইন্টারন্যাশনাল ও নীটওয়্যার নামে দেশিয় দু’টি ও আলফা ক্রিয়েশন নামে একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান। যেখানে ক্রেতা হিসেবে দেখানো হয়েছে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে। সন্দেহের অনুসন্ধানে, কাগজে-কলমের বাইরে যেসব প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি ভুক্তভোগীরা।
এসব ঘটনা ধরার পরও প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি ক্ষতিগ্রস্তরা।
ড্রেস আপ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘নিজের ফ্লাটটা বিক্রি করে এই মাসের বেতন জোগাড় করেছি। ছয় কোটি চল্লিশ লাখ টাকা যদি দেখি মুহূর্তের মধ্যে নাই আমাদের তো আসলে দিশেহারা হওয়াটা ছাড়া কোন উপাই নাই। ক্যান্টনমেন্ট থানায় গেছি অনেকবার। কিন্তু থানা বলছে, এই ধরণের মামলা নেয়া যাবে না। মামলা মোকদ্দমায় যেতে আমাদের ব্যাংকগুলো নিরুৎসাহিত করে।’
তবে, পুলিশ জানায় মামলা নিতে তাদের আন্তরিকতার কথা। যদিও কয়েক দফা ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে ড্রেস আপ লি.র মামলার আবেদন।
ক্যান্টনমেন্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান, ‘বাদী এখন পর্যন্ত মামলা করতে আসে নাই। যদি কোন সময় আসে তাহলে তো মামলা হতেই পারে।’
আর কয়েক দফার চেষ্টাতেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের সাথে।
নানা প্রতিকূলতার মধ্যে থাকা পোশাক খাতে এসব জালিয়াতির ঘটনা যোগ করেছে দুশ্চিন্তা। প্রতারিত কারখানার সংখ্যা ২০ আর পাঁচেই সীমাবদ্ধ থাকবে না বলেও আশঙ্কা বিজিএমইএ’র।
বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাসির বলেন, ‘এদের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। অনেকে হয়তো এখনো প্রকাশ করে নাই। আমাদের মালিকদের সঙ্গে প্রতারণা করে এই সমস্যায় ফেলেছে। আমরা চেষ্টা করছি টাকাটা উদ্ধার করার।’
বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, ‘এগুলো ভুয়া প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তাদের যাচাই-বাছাই করা আমাদের দায়িত্ব, ব্যাংকেরও দায়িত্ব আছে। তারা ক্রেডিট রিপোর্ট দেখে নেবে, আদৌ সে কোম্পানিটা আছে কিনা।’
একের পর এক বেরিয়ে আসছে পোশাক শিল্পে প্রতারণার গল্প। এই গল্প কত লম্বা হবে তা জানা নেই উদ্যোক্তাদের। এমন আশঙ্কা থেকে তারা বলছেন, দেশি-বিদেশি এসব প্রতারক চক্রকে থামাতে না পারলে শুধু শিল্প মালিকরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না, দেশের পোশাক শিল্পের ভাবমূর্তিতেও পড়বে নেতিবাচক ছাপ। তাই অভিনব কৌশলে এসব ফাঁদ পাতার গল্প বন্ধে শিল্প মালিক, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক এবং প্রশাসনকে কাজ করতে হবে একসাথে, এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।